• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

১ বছরে মোটা চালের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকার বেশি

মিথুন চৌধুরী

  ১২ মে ২০১৭, ২০:৪৮

বাজারে ৪০ টাকার নিচে চাল বিক্রি হচ্ছে না। ১ বছরের ব্যবধানে সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, মোটা চালের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকার বেশি। যা বাজার জরিপে আরো বেশি দেখা যায়। শুধু মোটা চাল নয় পাশাপাশি বেড়েছে অন্যান্য চালের দাম।

কাওরান বাজারের নুরানী রাইস ভান্ডারের পাইকার মাসুদ বলেন, মিল মালিকরা খেয়ালখুশি মত দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। চাল কিনতে পাইকাররাও হিমশিম খাচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতারা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।

মাসুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জননী রাইসের মালিক শফিক হোসেন বলেন, এখন আমাদের ঋণ নিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। ব্যবসা ধরে রাখতে এছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। সিন্ডিকেটে চালের দাম রাতারাতি বাড়ছে। গেল মাসে যে মিনিকেটের যে বস্তা কিনতাম ২৪৫০ টাকা দিয়ে, সে বস্তা কিনতে হয় ২৫৫০ দিয়ে। তাহলে খুচরা যারা বিক্রি করেন এদের কাছে আমাদের বিক্রি করতে হয় ২৬০০ টাকা। না হলে আমরা খাব কি কর্মচারীদের দিব কি!

মাসুদ ও শফিকের মতো অনেক পাইকার একই সুর মেলালেন কাওরন বাজারের বেশ পাইকার।

এদিকে হাতিরপুলের খুচরা চাল বিক্রেতা আমিনুল জানান, চাল বিক্রি কম বললেই চলে। নিত্যদিন ক্রেতাদের সঙ্গে ঝগড়া বাধে। ওজনে একটু হেরফের হলে ব্যবসাও চলে যাচ্ছে।
হাতিরপুল বাজারের অপর চাল বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ পরিচিত ক্রেতারা বাকিতে চাল নিয়ে মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছে। তাই অনেকে বেশ কয়েক ধরনের চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। যা দিয়ে কোনোমতে ব্যবসা ধরে রাখা যায় এমন কয়েক প্রকার চাল কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাইকারদের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা মিল মালিকদের দোষ দেন। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
চলতি বছরের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি) ১০ মে হিসাবে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ২০১৬ সালের একইদিনে ছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা।

হিসেবে আরো দেখা যায়, ১ মাস আগে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির ১০ মে ২০১৭ সালের হিসেবে আরো দেখা যায়, প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। যা ২০১৬ সালের এ দিনে ছিল ৪৪ থেকে ৫৫ টাকা। নাজির বা মিনিকেটের সাধারণ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। যা ২০১৬ সালের এ দিনে ছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা।

নাজির বা মিনিকেটের উন্নত চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। যা ২০১৬ সালের এ দিনে ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। পাইজাম বা লতার সাধারণ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। যা ২০১৬ সালের এ দিনে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। পাইজাম বা লতার উন্নত চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। যা ২০১৬ সালের এ দিনে ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাজার ধরে দেখা যায়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ৮ মে ২০১৭ তথ্য মতে বলা হয় মোটা চালের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। মোটা চালের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে দেশে মোটা চালের জাতীয় খুচরা গড় দাম ছিল কেজি প্রতি প্রায় ২৬ টাকা। পরের দুই বছর তা যথাক্রমে ৩০ ও ৩৩ টাকা ছিল। ২০১৫ সালে মোটা চালের গড় দাম ছিল কেজি প্রতি ২৮ টাকা ৬৭ পয়সা।

রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। নাজির ৪৪ থেকে ৫৬, কাটারিভোগ ৭৬, মিনিকেট ৫২ টাকা, পারিজা ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বছরে দেশে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি টন। প্রতিবছর সারাদেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ টনের মতো।

কাওরান বাজারের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, বন্যার কারণে বোরো ধানের চাল সময়মত বাজারে আসতে পারেনি। মিল মালিকদের কাছে যে চাল রয়েছে, তা মজুদ রাখা হয়েছে। বাজারে কম ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু হাওরের বন্যাতো গেলো মাসে হলো। এর আগ থেকেই তো চালের দাম বেশি। মূলত সিন্ডিকেটে মিল মালিকরা বাজারে চাল বিক্রি করছে।

সম্প্রতি চাল কল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, কোনো দেশেই সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক থাকে না। বাংলাদেশেও একসময় ছিল না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার আশায় চাল আমদানি করায় শুল্কারোপ করা হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে এ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব এনবিআরের কাছে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে। চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করলে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে চাল আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণ তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার চালের বাজার স্থিতিশীল করতে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির সুযোগ তৈরিতে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চাল উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কৃষকস্বার্থ বিবেচনায় এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে চাল আমদানি নিরুত্সাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুল্কহার ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়।

গেল ৩০ এপ্রিল বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ কোটি পঞ্চাশ লাখ দুই হাজার সাত শ' মেট্রিক টন ধরা হয়েছে, যা অনায়াসে অর্জিত হবে। হাওর অঞ্চলে বন্যার প্রভাবে যে ফসল নষ্ট হয়েছে তার কোনো প্রভাব চালের দামের ওপর পড়বে না। ফলে রমজানে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।

এমসি/এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh