• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

উত্তরবঙ্গে কান্না এখনো থামেনি

মিথুন চৌধুরী

  ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:২২

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে অকালে প্রাণ হারা শ্রমিকদের অধিকাংশের বাড়ি উত্তরবঙ্গে।

দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নাড়া দেয়া এ ঘটনায় ১১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হন, তাদের মধ্যে ৫৪৬ জনই উত্তরবঙ্গের সন্তান। এ ঘটনায় ২ হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি উত্তরবঙ্গে।

চার বছর পেরিয়ে গেলেও কান্না থামেনি এ অঞ্চলবাসীর। বেশিরভাগ নিহতরা একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। ফলে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে অনেকের সাজানো সংসার। একমাত্র উপর্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক বৃদ্ধ বাবা-মা। আবার বাবা-মা হারিয়ে অনাথ হয়ে গেছে অনেক শিশু। আদরের শিশুরা অযত্নে আর অবহেলায় জীবনযাপন করছে প্রতিনিয়ত। কিছু কিছু শিশুর বিভিন্ন সংগঠন ও এতিমখানায় স্থান হলেও অবহেলায় দিনযাপন করছে অনেকে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সমিতির হিসেবে নিহতদের মধ্যে ঠাকুরগাঁয়ের ৩৫, নীলফামারী ১২, পঞ্চগড় ৪, লালমনিরহাট ৬, দিনাজপুরের ৫৪, রংপুর ৭৪, কুড়িগ্রাম ১৪, গাইবান্ধা ৭৪, জয়পুরহাট ১৩, বগুড়া ৩৫, রাজশাহী ২১, নাটোর ১৮, পাবনা ৪৩, সিরাজগঞ্জ ২৫, জামালপুর ৩১, শেরপুর ১৭, টাঙ্গাইল ৩২, ময়মনসিংহ ৩৩ ও নেত্রকোনার ৫ জন।

অপরদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে নবাবগঞ্জ ২, মানিকগঞ্জ ৭৩, ঢাকা ৬৩, গাজীপুর ৪, মুন্সীগঞ্জ ২, নারায়ণগঞ্জ ২, নরসিংদী ২, কিশোরগঞ্জ ১৪, সুনামগঞ্জ ৫, হবিগঞ্জ ১৬, মেহেরপুর ৫, চুয়াডাঙ্গা ৭, কুষ্টিয়া ২৪, ঝিনাইদাহ ১৭, মাগুরা ৮, যশোর ১৪, নড়াইল ৬, খুলনা ১৭, সাতক্ষীরা ৫, বাগেরহাট ১৭, রাজবাড়ি ৫৯, ফরিদপুর ২৪, গোপালগঞ্জ ১৩, পিরাজপুর ১৬, মাদারীপুর ১৪, শরীয়তপুর ১৫, ঝালকাঠি ১৭, বরিশাল ২৯, ভোলা ১৯, পটুয়াখালী ১০, বরগুনা ৩০, চাঁদপুর ১৮, কুমিল্লা ৭, নোয়াখালী ৬, লক্ষীপুর ৮, ফেনী ২, চট্টগ্রাম ১৫ ও রাঙামাটির ২ জন প্রাণ হারান।

সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়।সেনাবাহিনী যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৬১ জন নিখোঁজের ঘোষণা দেয়।

২০০৭ সালে রানা প্লাজা নির্মাণ করার আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে এটি ভরাট করা হয়। ভবনের ওপরের চার তলা অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল।

ঘটনার আগের দিন (২৩ এপ্রিল) ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়। যা গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। কিন্তু ভবনটি নিরাপদ ঘোষণা করে শ্রমিকদের কাজে আসতে বাধ্য করেন গার্মেন্টস মালিকরা। ঘটনার পর দিন ২৫ এপ্রিল ঢাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন ও ওই ভবনের গার্মেন্টস মালিকদেরকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন।

২৭ এপ্রিল এ ভবনের দু'টি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সাভার পৌরসভার দু'জন প্রকৌশলীকেও গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া হয়। ২৮ এপ্রিল এ ঘটনায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে ভারতে পালিয়ে যাবার সময় বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে সরকারিভাবে আলাদা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশের শ্রমবাজার বহির্বিশ্বে ঝাঁকুনির মধ্যে পড়ে। তৈরি পোশাক খাতের সুনাম নষ্ট হয়ে যায়। বিদেশের বাজারে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের জেএসপি সুবিধা। যা আজও বন্ধ রয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর হতাহতদের জন্য প্রায় ১৫২ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে বলে ২০১৬ সালের ১৪ জুন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২তম বৈঠক হতে জানা যায়।

এমসি/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh