• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

কে আগে ফুল দেবে, এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা

শানে আলম সজল, চট্টগ্রাম

  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:২৮

২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে চির স্মরণীয় দিন। পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে এমন ঘটনা বিরল। তাই ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে দেশের সব শহিদ মিনারে হাজির হয়েছেন হাজারো মানুষ।

দেশের সব জায়গায় সুশৃঙ্খলভাবে শহিদ মিনারে ফুল দেয়ার খবর পেলেও একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ফুল দেয়ার সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়েছে। ফুল দিতে গিয়ে মূল শহিদ বেদিতে মারামারি ও হাতাহাতিরও ঘটনা ঘটেছে।

সব থেকে বড় যে ব্যাপারটা চোখে পড়ার মতো ছিল সেটা হলো বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল কে কার আগে ফুল দিবে বা ফুল দেয়ার লাইনে আমাদের আগে ‘ওরা’ কেন?

অভিযোগ উঠে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধারাও নেমেছিলেন ফুল দেয়া নিয়ে ধাক্কাধাক্কির প্রতিযোগিতায়। এছাড়া প্রতিবছর যে নিয়মে ফুল দেয়া হয় এবার রাজনৈতিক নেতারা সেই নিয়মও মানেননি।

রাত ১২টা ১ মিনিটে ফুল দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর প্রথমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জান চৌধুরী জাবেদ এবং সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ফুল দেন। এরপর প্রতিবছর বিভাগীয় কমিশনার ফুল দিলেও এবার বিভাগীয় কমিশনারকে পেছনে ফেলে ফুল নিয়ে শহীদ বেদিতে উঠে যান সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম। তার সঙ্গে সিডিএ কর্মকর্তারা ছাড়াও ছিলেন একদল নেতাকর্মী। এর মাঝে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ফুল নিয়ে ৪-৫ জন নেতাকর্মীও শহীদ বেদিতে উঠে যান। পুরো সময় সরকারি কর্মকর্তা শহীদ মিনারের সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে থাকেন।

এরপর সরকারি কর্মকর্তাদের পুষ্পস্তবক অর্পণের পালা শুরু হলে পেছন থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় তারা তাদের আগে ফুল দিতে দেয়ার দাবি জানাতে থাকে।

একই সময়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের মূল ফটকের বাইরে হাতাহাতিতে জড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পেছনে ছিল।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফুল দেয়ার শেষ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সন্তান কমান্ড’কে নিয়ে হুড়োহুড়ি করে ফুল দিতে উঠে যান শহিদ বেদিতে। এ সময় কাস্টমস এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও তাদের আগে ফুল দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মিলে কাস্টমস ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ উঠে।

এদিকে শহিদ বেদিতে উঠার পরই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের দু’পক্ষ মারামারি শুরু করে। এসময় তারা শহিদ বেদিতে রাখা ফুল এলোপাতাড়ি ছুঁড়তে থাকে।

এছাড়া চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ ফুল দিতে উঠলে তখন তাদের সঙ্গেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্যদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের লাঠিচার্জ করে শহিদ বেদি থেকে নামিয়ে দেয়।

কর্মসূচির সঞ্চালক নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আশির দশক কিংবা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝির পর যেসব প্রজন্ম গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে আমরা একুশ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা জাগ্রত করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। তাই তারা শহিদ মিনারকে কিভাবে সম্মান করতে হয় জানে না।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে আরটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখ জনক। শহিদ ব্যাধিতে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামে ব্যানারে দু’গ্রুপ মারামারি করছে। তাদের একটা সঠিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আরেকটি বহিরাগত।

তিনি আরো বলেন, কে কার আগে ফুল দিবে সেটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সিদ্ধান্তে প্রথমে মন্ত্রী,এরপর মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যাবার কথা ছিল। কিন্তু রাতে তা মানা হয়নি। মন্ত্রী ও মেয়র যাবার পর সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম ফুল দিতে উঠে যায় যুবলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে। এছাড়া কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা ও আইনজীবী সমিতির নেতা-কর্মীরা কোন বছর ফুল দিতে আসে না। এ বছর তারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আগে গিয়ে বিশৃঙ্খল করে।

তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন শহিদ মিনারে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য স্লিপের ব্যবস্থা করতে পারে। উপস্থিত যারা আছে তাদের নাম নিয়ে স্লিপ দিলে এত ঝামেলা হতো না। আসছে ২৬ মার্চ কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) এসএম মোস্তাইন হোসাইন আরটিভি অনলাইনকে জানান, শহিদ মিনারের বেধিতে ফুল দিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামের দুটি সংগঠন বিশৃঙ্খল করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ফুল দিয়ে আসার সময় মোবাইল ফোনে সেলফি তোলা নিয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh