দালালের নৌকায় আসতে গিয়েই প্রাণ গেলো রোহিঙ্গাদের
টেকনাফের জাদীমুরার ইসমাঈল নামে এক দালাল মিয়ানমার থেকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মুসলিকে বাংলাদেশে আনার জন্য নৌকা পাঠায়। ৩০ থেকে ৩৫ নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় নৌকাটি টেকনাফের নাফ নদীর মিয়ানমার জলসীমায় ঢুবে যায়। এতে প্রাণ যায় বেশ কয়েকজনের। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকেই।
সোমবার ভোরে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদীমুড়া বরাবর নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে এ ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার হওয়া মিয়ানমারের গৌজিবিলের রেহেনা আরটিভি অনলাইনকে জানান, গভীর রাতে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাটি মিয়ানমারের রইঙ্গাদং সীমান্ত থেকে জাদীমুরার দিকে যাত্রা করেছিল। অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে নদীর মাঝখানে নৌকাটি হঠাৎ ডুবে যায়।
ডুবার পর তিনি কোনো রকমে সাঁতরিয়ে একটি দ্বীপে ওঠেন। পরে জেলেদের নৌকা দেখে চিৎকার করে ডাক দিলে নাটমোরা পাড়ার আশীষ ও সুশান্ত দাস নামের দু’জেলে তাকে উদ্ধার করে সকাল ৯টার দিকে জাদীমুরা কবির হোছেন নামের এক আত্মীয়র বাড়িতে পৌঁছে দেন।
মিয়ানমারে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তার মা বিলকিছ বেগম (৫৫), ভাবী মনিরা (৩২) ও ভাইপো সোয়াইবের (৮) মৃতদেহ উদ্ধার করে মংডুর বড় গৌজিবিল নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, জাদীমুরার দালাল ইসমাঈল তাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্যই নৌকাটি পাঠিয়েছিলেন। তার স্বামী মৌলভী মো. আমিন গত ১০ দিন আগেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন।
উদ্ধারকৃত রেহেনাকে মানবিক সয়হায়তা ও চিকিৎসার জন্য নয়াপাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মদ আলী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভোরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। তবে বিস্তারিত জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে।’
সপ্তাহখানেক আগে অনুপ্রবেশকৃত মুছনী ক্যাম্পের জাবেদ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ওই নৌকায় আমার ৪ ছেলে ছিল। তাদের এখনো সন্ধান পাইনি।’ নিখোঁজদের সন্ধানে জাদীমুরা সীমান্তের নাফ নদীর কাছাকাছি স্বজনরা অবস্থান করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাদীমুরা গ্রামে অবস্থানরত কিছু সিন্ডিকেট অবৈধ রোহিঙ্গা পারাপারের সঙ্গে জড়িত। ওই গ্রামের মো. ইসমাঈল, রোহিঙ্গা মো. হাশিম, আরফাত, মো. সালাম ওরফে বলি গুইজ্জা সিন্ডিকেটই গেলো রাতে মিয়ানমারের বড় গৌজিবিল থেকে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাটি বাংলাদেশের জাদীমুরা সীমান্তে নিয়ে আসছিল।
এদিকে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ আরটিভি অনলাইনকে বললেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। বিজিবি-২ এর অধিনায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
এ ব্যাপারে ব্যাটালিয়ন-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ বলেন, ‘নৌকা ডুবির ঘটনাটি সত্য নয়। ওই নারী পালিয়ে এসেছেন এবং বাঁচার জন্য মিথ্যা কথা বলছেন। বর্তমানে সে আমাদের হেফাজতে রয়েছে।’
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চারটি রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
এসএস/ এস
মন্তব্য করুন