উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বাড়ছে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বন্যা পরিস্থিতির চিত্র:
গাইবান্ধা: গাইবান্ধা জেলায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদ-নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ১৮২টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে জেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের বেরিবাঁধ ভেঙ্গে চিনিরপটল, পবনতাইড়সহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে।
ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের গোদারহাট, কুঠিপাড়া পয়েন্টে কিছু অংশ ধসে যাওয়ায় বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদীর পানি মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়সূত্র জানায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলা সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের প্রায় ৩০ টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। এতে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ।
প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। সদর এলাকার কুলাঘাটে ধরলা নদীর ফ্লাড বাইপাস ভেঙ্গে ৩টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের এ বাঁধটি ভাঙছে নিয়মিত। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। কারণ বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে এসব পরিবারের লোকজন বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। নদী গর্ভে চলে যাবে সহ্রসাধিক বিঘা আবাদি জমি, শতাধিক ফলের বাগান, কয়েকটি স্কুল মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও স্থাপনা।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। টানা ৮ দিন নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে মহাসড়ক। স্রোতের টানে ভেঙে পড়েছে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘর।
ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১ মিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি হিসেবে ৯ উপজেলার ৫৩টি ইউনিয়নে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৫ জন মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে এক শিশু।
কুড়িগ্রাম ত্রাণ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব মোল্লা জানান, বন্যার পানিতে ডুবে একটি শিশু মারা গেছে।
মন্তব্য করুন