• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

কাঁঠালবাড়ী ঘাটের চাপ দৌলতদিয়া

ঢাকায় ফিরতে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ভোগান্তি চরমে

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৬ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১০

নাব্য সংকটের কারণে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল সাড়ে পাঁচঘণ্টা বন্ধ থাকায় ঢাকায় ফিরতে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়াঘাট ব্যবহারের জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাই কাঁঠালবাড়ী ঘাটের চাপ পড়েছে দৌলতদিয়া ঘাটে। তবে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

প্রায় সাড়ে পাঁচঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রী ও পরিবহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে সহস্রাধিক যানবাহন ঘাটের উভয়পাড়ে আটকা পড়েছে। তবে এতে বেশি বিপদে পড়েছেন ফেরি পারাপারের যাত্রীরা। শিশু-নারী ও বয়স্কদেরসহ যারা বেশি লাগেজ নিয়ে ফেরি পারাপারের গাড়িতে টিকিট কেটেছেন, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পারাপারের আশায়। আর যাদের সঙ্গে তেমন লাগেজ বা শিশু ও বয়স্ক মানুষ নেই, তাড়া লঞ্চ ও স্পিডবোটে করে পার হয়ে শিমুলিয়া এসে ঢাকাগামী পরিবহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন। অনেক যাত্রী রাতের গাড়িতে এসে সকালে অফিস করবেন বলে ভেবেছিলেন কিন্তু ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় তাকে নির্ধারিত গাড়ি রেখে লঞ্চ ও স্পিডবোটে পার হয়ে এপারে এসে অন্য গাড়িতে করে ঢাকা আসতে দেখা গেছে।

-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : রোগের জ্বালা সইতে না পেরে ২ বৃদ্ধের আত্মহত্যা
-------------------------------------------------------

শিমুলিয়া এসে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। কারণ গাড়িভাড়া নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ। যেখানে শিমুলিয়া থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৭০ টাকা সেখানে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা করে রাখা হচ্ছে যাত্রীপ্রতি।

ঢাকার বাসাবোর যাত্রী পলাশ আহসান বলেন- খুলনা থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে দেখি ফেরি চলে না। বাধ্য হয়ে লঞ্চে করে শিমুলিয়ায় আসি। এসেই পড়ি আরেক বিপাকে। নির্ধারিত ভাড়ার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আমার অফিস ধরতে হবে তাই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ঢাকায় এসেছি।

অতিরিক্ত ভাড়ার কথা জানতে চাইলে শিমুলিয়া থেকে ঢাকার পথে চলাচলকারী গাঙচিল পরিবহনের কর্মচারী সুমন বলেন- ‘ঢাকা থেকে যাত্রীছাড়া বাস নিয়ে শিমুলিয়ায় আসতে হচ্ছে। তাই গাড়ির তেল ও টোল ভাড়ার জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন- একসঙ্গে অনেক যাত্রী শিমুলিয়াঘাটে আসতে শুরু করায় গণপরিবহন সংকট দেখা যায়। বাসে ওঠার জন্য কয়েকহাজার মানুষ অপেক্ষা করছে। এই সুযোগে অনেক বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি।

একই অবস্থা বিরাজ করছে দৌলতদিয়া ঘাটে। নাব্য সংকটে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় তার চাপ পড়েছে দৌলতদিয়ায়। এজন্যে অবশ্য কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া ঘাটের কয়েকটি ফেরি দৌলতদিয়া গেছে। কিন্তু তাতেও সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ঘাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী ও শিশুদের। রোববার সকাল থেকেই রাজধানীমুখী যাত্রীর ঢল নামে দৌলতদিয়া ঘাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে এ ঢল। যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিগুলো পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী নামিয়ে দিয়েই ফেরত আসছে দৌলতদিয়া ঘাটে।

দীর্ঘ ১০-১২ ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা ভুক্তভোগী চালক ও যাত্রীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দালাল নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবহন ফেরিতে উঠাচ্ছে। যে কারণে দূরপাল্লার পরিবহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টি স্বীকার করেছে।

বাসচালক শফিকুল অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কিছু লোক ক্ষমতা দেখিয়ে ফেরিতে গাড়ি তোলেন। তারা কোনও নিয়মনীতি মানেন না। যে কারণে এতো দুর্ভোগ মানুষের।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিকেল তিনটার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।

রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া-ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে রাজবাড়ী মহাসড়কের দুপাশ জুড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার যানজট হয়েছে। দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে ঢাকামুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। নদীর পাড়ে ফেরি ও লঞ্চ সংকটে চরম অব্যবস্থাপনা। ফলে ঢাকাগামী যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

যশোর থেকে আসা যাত্রী বিথীকা রহমান জানান, স্বামী ও শিশু কন্যাকে নিয়ে গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে বাসে উঠেছিলেন। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে পৌঁছান রাত আড়াইটায়। কিন্তু সকাল আটটা পর্যন্ত বাস ফেরিতে উঠতে পারেনি। শেষটায় বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে লঞ্চযোগে পাটুরিয়ায় পৌঁছান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতদিয়া-রাজবাড়ী সড়কের দৌলতদিয়া ইউপি অফিস থেকে যাত্রীরা প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পায়ে হেঁটে নৌযানে উঠছেন। লঞ্চ কাউন্টারের সামনে যাত্রীরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লঞ্চ ও ফেরির ছাদ থেকে শুরু করে নৌযানগুলোর প্রতিটি স্থানে যাত্রী তোলা হচ্ছে। স্পিডবোট এ নৌপথে চলাচলের অনুমতি না থাকলেও ঘাটে পুলিশের সামনেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে উত্তাল পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিতে দেখা গেছে। ঘাটের প্রতিটি প্রবেশপথেই রয়েছে উপচেপড়া ভিড়।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নামে। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন শিমুলিয়া থেকে যাত্রীশূন্য ফেরি এনেছে। অন্যান্য দিন ফেরিতে যানবাহন সংকট থাকলেও এদিন সকাল থেকেই যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়েছে।

তিনি আরও জানান, ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে এ রুটে ২০টি ফেরি ও ৩২টি লঞ্চ রাখা হয়েছে। এছাড়া তিন শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

আরও পড়ুন :

পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh