‘সারা শরীরে যে কী ব্যথা কীভাবে বোঝাব?’
‘সারা শরীরে যে কী ব্যথা তা কীভাবে বলে বোঝাব? এই যে বসে আছি এভাবে কতক্ষণ বসে থাকা যায় বলেন, নড়াচড়া তো করতেই হয়, তাই না? কিন্তু আমি তো তা পারছি না! একটু নড়লেই ব্যথা লাগছে। সহ্য করার মতো নয় রে ভাই!’
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে দেখতে গেলে এভাবেই নিজের ওপর হওয়া পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারিক।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ড. সুব্রত কুমারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।
তারিকের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন তার সহপাঠী মতিউর রহমান। তিনি চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, তারিকের মাথায় নয়টা সেলাই দেয়া হয়েছে। প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় ওর শরীর অনেক দুর্বল। ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করায় তারেকের ডান পা একেবারে ভেঙে গেছে। ব্যান্ডেজ করা হয়েছে এখনও প্লাস্টারও করা হয়নি। অস্ত্রোপচার না করলে তার পা স্বাভাবিক হবে না। আর তার পুরো শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সবসময় ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
সিটিস্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে তারিকের মস্তিষ্কে বড় ধরনের কোনও সমস্যা হয়নি। তবে পুরোপুরি সেরে উঠতে বেশ সময় লাগবে এমনটাই জানান মতিউর।
গেল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করলে রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : নিখোঁজের ৩ দিন পর ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার
--------------------------------------------------------
হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, লতিফুল কবির মানিক, সহ-সভাপতি গোফরান গাজী, মিজানুর রহমান সিনহা, রমিজুল ইসলাম রিমু, সাদ্দাম হোসেন, আহমেদ সজীব, ছানোয়ার হোসেন সারোয়ার, আরিফ বিন জহির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুল জামিল সুস্ময়, হাসান লাবন, ইমতিয়াজ আহমেদ, কর্মী জন স্মিথ ও রাশেদ খান একযোগে আক্রমণ চালায়।
ভুক্তভোগী তারিক ছবি দেখে দাবি করেন, লতিফুল কবির মানিকের আঘাতেই তার পা ভেঙে যায়। এরপর সবাই তাকে ইচ্ছামতো মারধর করে। যিনি তার ফেসবুজ পেজে হুঁশিয়ারি দিয়ে স্ট্যাটাস দেন, ‘গর্জে উঠেছে ছাত্রলীগ..এবার সাহস থাকলে রাজপথে নাম, নেড়ি কুত্তার মতো তোদের পিটাব...।’
এদিকে তারেকের বন্ধুরা তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে। অনেকে হাসপাতালে গিয়ে সহায়তার কথা জানালেও আদতে কেউ আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়ায়নি।
এদিকে পরিবারের পক্ষে টাকা ব্যয় করা অনেকটা কষ্টকর বলে জানান তারিকের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার বাবা কৃষক। আমরা তিন ভাইবোন পড়াশোনা করি। আমাদের পড়াশোনার খরচ ঠিক মতো দিতে পারে না। তার ওপর আমার ভাইয়ের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করা। কী হবে আল্লাহ্ জানেন!
এ বিষয়ে মামলা দায়ের করবেন কিনা জানতে চাইলে তারিক বলেন, ভাই আমরা সাধারণ ছাত্র হয়ে আন্দোলনে এসেছি। আমরা তো কারও বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ছিল না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, তারিক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখন তার বন্ধুরা মিলে যদি আর্থিক সহায়তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করে তাহলে অবশ্যই সহায়তা করা হবে।
প্রয়োজনে তারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭৩৮-৫০১১৬৪ এই নম্বরে। সহায়তা করতে বিকাশ:০১৭৮৬-৭৩১৬৮৮, রকেট: ০১৭৩৮-৫০১১৬৪৬।
আরও পড়ুন :
জেবি/ এমকে
মন্তব্য করুন