• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘মা সৌদি আরবের নরক থেকে আমাকে নিয়ে যাও’

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ

  ০৫ জুন ২০১৮, ২০:১০

দিনমজুর স্বামী শামীম আর একমাত্র সন্তান তানিমের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সৌদি আরবে গিয়ে এখন রীতিমতো দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ফকিরপাড়ার গ্রামের আব্দুলের মেয়ে শাহনাজ। সেখানে প্রতিদিন গৃহকর্তা ও তার পরিবারের লোকজনের দ্বারা পাশবিক নির্যাতন পোহাতে হচ্ছে তাকে।

কবে সৌদি আরবের নরক যন্ত্রণা থেকে তার মেয়ে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসবে এই আশায় প্রহর গুনছেন শাহনাজের পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে শাহনাজের পরিবার শাহনাজকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন।

গেলো সপ্তাহে সরেজমিনে জয়মন্টপ গ্রামে শাহনাজের পৈত্রিক বাড়িতে গেলে কথা হয় শাহনাজের মা সাইদা বেগম ও তার নিকট আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে। কয়েক ঘণ্টা ওই বাড়িতে অবস্থানের সময় যতবার শাহনাজ সম্পর্কিত কথাবার্তা হচ্ছিল ততক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শাহনাজের অবুঝ সন্তান তানিম ফ্যাল ফ্যাল করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব শুনছিল। তানিম তারা নানা আব্দুলকে জিজ্ঞেস করছিল তার মা কখন আসবে, আমি মার কাছে যেতে চাই।

শাহনাজের মা জানান, একই ইউনিয়নের পুর্বভাকুমপুর গ্রামের মৃত কাসেম শিকদারের ছেলে সমে শিকদার আর মহিদুরের মাধ্যমে মেয়েকে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছে। ঢাকার ফকিরাপুলের সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেলসের মাধ্যমে তারা শাহনাজকে ১৮ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে সৌদি আরবে পাঠায়। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে ওই বেতনতো দূরের কথা উল্টো শাহনাজের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। তিন বেলার খাবারের পরিবর্তে তাকে দেয়া হয় এক বেলা রুটি। কাজে একটু উনিশ-বিশ (কম হলে) হলে আর রক্ষে নেই।

তিনি আরও জানান, সৌদি আরবের রিয়াদে যে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে শাহনাজ কাজ করছে সেখানে তাকে নানানভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। ভোর সাড়ে চারটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে তাকে কাজ করতে হয়। শারীরিক, মানসিক ও অনৈতিক কাজ করাতেও বাধ্য করা হচ্ছে তাকে।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, শাহনাজ মোবাইলে ফোন করে আমাকে বলে মা দ্রুত সৌদি আরবের এই নরক যন্ত্রণার হাত থেকে উদ্ধার করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আস। আমরা এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। মেয়ে মার কাছে সাহয্য চাচ্ছে, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। এটা যে কতো কষ্টের সেটা কেউ বুঝবে না।

শাহনাজের স্বজনরা জানায়, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি সৌদি আরব যায় ২০ বছর বয়সী শাহনাজ। সেখানে যাওয়ার পর গৃহকর্তা তার কাছ থেকে তার পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোনটি নিয়ে নিয়েছে। যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। দালাল সমে আর মহিদুরকে শাহনাজের এসব নির্যাতনের কথা বললে তারা কোনো কর্ণপাত করছে না। উল্টো তারা তার কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবী করছে। তারা জানায়, এই টাকা দিলে শাহনাজকে তারা দেশে আনার ব্যবস্থা করবে।

শাহনাজের বাবা আব্দুল জয়মন্টপ বাজারে একটি মুরগীর দোকানের কর্মচারী। তার আয় দিয়ে তার সংসারই চলে না। নাতীর জন্য আলাদা খরচ গুনতে হচ্ছে। এই অবস্থায় তার পক্ষে এতোগুলো টাকা জোগাড় করা খুব কষ্টের ব্যাপার বলে জানার তিনি।

গেলো ১৪ মার্চ শাহনাজকে সৌদি আরব থেকে ফেরত আনতে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের আরএসসি বিভাগের ব্যবস্থাপকের কাছে একটি আবেদন করেন শাহনাজের বাবা আব্দুল। কিন্তু তাদের কাছ তেকে কোন সাড়া পাচ্ছেন না।

শাহনাজরে স্বামী বায়রা গ্রামের দিনমজুর শামীম হোসেন বলেন, প্রায় ছয় বছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। নিজের একখণ্ড জমি না থাকায় স্ত্রী আর একমাত্র সন্তান ছেলে তানিমকে নিয়ে নানীর বাড়িতে থাকতো। পরিবারের সুখ ফিরিয়ে আনতে স্ত্রী শাহনাজ সৌদি আরবে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে পরিবারের সুখতো দূরের কথা নিজের জীবন এখন যায় যায় অবস্থা। তার ওপর অনৈতিক কাজসহ নানান জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে। দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা অনেক টাকা চাচ্ছেন।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কোরবানির ঈদের সম্ভাব্য তারিখ
যে কারণে জেল থেকে বের হয়েই স্ত্রীকে হত্যা করল স্বামী 
ওমরাহ ভিসার মেয়াদে পরিবর্তন
অপবাদ দিয়ে স্কুলশিক্ষককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
X
Fresh