৫৪ লাখ টাকা গেলো ভাঙা ব্রিজ ভাঙাই রইলো
গেলো বর্ষায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর এলাকায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ে ৫৪ লাখ টাকার ব্রিজ।
ব্রিজটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছিল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ব্রিজটি ধ্বসে পড়ার প্রায় এক বছর পার হলেও সেটি এমনই আছে। সরকারের লাখ লাখ টাকার নষ্টের দায় যেন কারও নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ রাস্তায় কমবেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু/কালভার্ট (২০১৬-১৭) কর্মসূচীর আওতায় ৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ২৪ ফুট উঁচু এই পাকা ব্রিজ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা। আর এই ব্রিজটি নির্মাণ করছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ।
হারুকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এই ব্রিজটি নির্মাণে পদ্মা নদীপাড়ের হারুকান্দি, কাজিরটেক, মধুমালী, ভাটি-বয়রা, মির্জানগর, নারানকান্দি, গৌরবপুর ও জালসা গ্রামের জনসাধারণ খুব খুশী হয়েছিল। কিন্তু ব্রিজটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধ্বসে যাওয়ায় তাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। ওই আট গ্রামের মানুষদের উপজেলা সদরসহ এর আশপাশের এলাকা হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : চুয়াডাঙ্গায় ভারতীয় রূপার গহনাসহ চোরাকারবারি আটক
--------------------------------------------------------
তিনি আরও বলেন, ওই ব্রিজটি যথাসময়ে সম্পন্ন হলে পদ্মপাড়ের ওই আটটি গ্রামের উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের পরিবহন এবং যাত্রীপরিবহনে সুবিধা হতো। এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ছোট-বড় নানা ধরণের গাড়ি চলতে পারতো। কিন্তু ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় ওইসব গ্রামের মানুষদের পায়ে হেটে অথবা সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেল করে অন্যপথে যাতায়াত করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হচ্ছে।
হারুকান্দি গ্রামের গরুর খামারী ইদ্রিস মিয়া বলেন, ব্রিজটি যথাসময়ে সম্পন্ন হলে পদ্মা পাড়ের গ্রামগুলির ২০ হাজার জনসাধারণের চলাচল সহজ হতো। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় তাদের মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। আর মাত্র দুই মাস পর ঢালাই দিলে ব্রিজটি ধ্বসে পড়তো না।
দানেস্তপুর গ্রামের কৃষক শুকুর আলী, দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের কৃষক ছালাম তালুকদার, হারুকান্দি গ্রামের দিনমজুর শেখ জবেদ আলীসহ ওই এলাকার অনেকেই বলেন, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় তারা খুবই কষ্টে আছেন। তারা ভাঙা ব্রিজটি সেখান থেকে সরিয়ে সেখানে একটি ব্রিজ পুনর্নির্মাণের দাবী জানান।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান- মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী আব্দুল কাদের চৌধুরী বলেন, ব্রিজের ডিজাইনে ত্রুটি ছিল। তিনি যথাযথভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করেছেন। ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরুর দিন সেখানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও জানান, বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ব্রিজটি ধ্বসে গেছে। এতে তার কিছুই করার নেই, বরং ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার চূড়ান্ত বিল আটকে দিয়েছেন। তিনি মোট বিলের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন। বাকী টাকা পাওয়ার জন্য তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম শোভন বলেন, ব্রিজ নির্মাণের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিল। কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি। বর্ষা আসন্ন থাকায় তাকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে ২০ জুলাই পত্র দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ভরা বর্ষা মৌসুমে ৩১ জুলাই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং ১৯ আগস্ট ব্রিজের ঢালাই দেন। এর কয়েকদিন পর ব্রিজটি ধ্বসে যায়। এ কারণে ঠিকাদারের কাজের মোট বিলের ৭০ শতাংশ এখনও আটকা আছে।
তিনি বলেন, ব্রিজটি ধ্বসে যাওয়ার কথা তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। এর ফলে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু দাউদের নেতৃত্বে আরও দুইজন প্রকৌশলী ওই ভাঙা ব্রিজটি পরিদর্শন করেছেন। তবে এখনও ব্রিজটি সংস্কার কিংবা পুন:নির্মাণের কোনো নির্দেশনা পাওয়ায় যায়নি।
আরও পড়ুন :
এসএস
মন্তব্য করুন