• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তার নাম পাটুরিয়া

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

  ০৩ জুন ২০১৮, ১৩:৩৯

ঈদের কয়েকদিন আগে ও পরে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে যানজট, দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। পাটুরিয়া ঘাট থেকে এগারো কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের দৃষ্টান্ত আছে। পারাপার হতে না পারায় ঘরমুখো মানুষকে পাটুরিয়া ঘাটেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে। এই ফেরি ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী, চালকদের প্রশ্ন এবারের ঈদেও কি এমন অবস্থা হবে? ঈদে আসলে অনেকটা দুশ্চিন্তার মধ্যেই থাকতে হয় পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হওয়া যাত্রীদের।

অবশ্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন যানজট হলেও তা হবে সহনীয় মাত্রায়।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীসাধারণের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। আর এ কারণে এ ঘাটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র মতে, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত এই নৌপথের দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিন নটিক্যাল মাইল। এই দূরত্ব পার হতে স্বাভাবিক অবস্থায় একটি ফেরির সময় লাগে ৩৫ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট। প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে সাড়ে চার হাজার যানবাহন পারাপার হয় ১৫টি ফেরিতে। তবে ফেরি স্বল্পতা, নদীর নাব্যতা হ্রাস, ঘনকুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুযোর্গের কারণে পারাপারে বিঘ্ন ঘটলে ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা সেক্টরের এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ঈদের কয়েকদিন আগে গাড়ির চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। এ কারণে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের তিন দিন আগে এবং পরে জরুরি পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া সকল ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখা হবে। কমপক্ষে ৭টি বড় ফেরি, ৩টি মাঝারি ফেরি এবং ৬টি ছোট আকারের ফেরি এই নৌরুটে চলাচল করবে। প্রয়োজনে আরও ফেরি আনা হবে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং নাব্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ড্রেজিং করা হবে।

জিল্লুর রহমান আরও জানান, পাটুরিয়া অংশে তিনটি ঘাট এবং দৌলতদিয়া অংশে দুটি ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন উঠা-নামা করবে।

তিনি বলেন, গতবার ঘাট এলাকায় ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়া অংশে ফেরি ভিড়তে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এবার সে সমস্যা নেই। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

তবে দূরপাল্লা বাসের একাধিক বাস চালক জানান, প্রতি বছরই কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রতি ঈদেই ঘাটে এসে তাদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তারা অভিযোগ করেন অধিকাংশ ফেরি বহুদিনের পুরানো হওয়ায় সেগুলো বেশীর ভাগ সময় বিকল থাকে। মেয়াদউত্তীর্ণ ফেরি গুলিতে পারাপারেও সময় বেশি লাগে। ফলে ঘাটে অপেক্ষমাণ যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে।

একাধিক বাসের চালক অভিযোগ করেন, ঈদের ভিড়ে ফেরির সিরিয়াল নিয়ে কারচুপি করা হয়। দালালের মাধ্যমে টাকা পয়সা দিলেই সিরিয়াল আগে দেয়া হয়। চালকরা এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন।

এদিকে কাটা বাসের যাত্রীরা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট পার হয় লঞ্চে। বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ ফরিদুল আলম জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট রুটে মোট ৩৫টি লঞ্চ রয়েছে। এরমধ্যে ১৮টি লঞ্চ চলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে। গড়ে প্রতিদিন এই রুটে ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। কিন্তু ঈদের মধ্যে যাত্রী বেড়ে যায় ৫/৬ গুন।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল করায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ। ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখতে তিনি ইতোমধ্যে মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ি জেলা পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ঈদের মধ্যে যাত্রীদের চাপ সামলাতে মালিকদের লঞ্চ বৃদ্ধি করার চিঠি দেয়া হয়েছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার রুটে নিয়মিত লঞ্চে চলাচলকারী কয়েকজন জানান, ঈদের মধ্যে এই রুটে যাত্রীর তুলনায় লঞ্চের অনেক ঘাটতি থাকে। যে কারণে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলি চলাচল করে। এতে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয় যাত্রীদের।

অনেকে অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত লঞ্চ না থাকায় অনেক সময় তারা ট্রলারে করেও নদী পাড়ি দেন। লঞ্চে পার হতে সময় লাগে ২০ মিনিট। কিন্তু ফেরিতে যানবাহন লোড, আনলোড এবং ঘাটে ভিড়তে অনেক বেশি সময় লাগে। এজন্য অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ অথবা ট্রলারে যাতায়াত করেন। লঞ্চ মালিকরা অতিরিক্ত লাভের জন্য লঞ্চ বাড়ায় না। ঝুঁকিতে ফেলে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

এদিকে পাটুরিয়া ঘাটে যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে ট্রাফিকের অব্যবস্থা। ঢাকা-আরিচা (পাটুরিয়া) মহাসড়ক থেকে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে ঢোকার প্রায় আধা কিলোমিটার আগে রয়েছে তিন রাস্তার মোড় (আরসিএল মোড়)। এর বাম দিকের রাস্তা দিয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের মতো ছোট গাড়ি ফেরি ঘাটে ঢোকানো হয়। সোজা রাস্তা দিয়ে ঘাটে ঢোকানো হয় দূরপাল্লার বাস। ডান দিকের রাস্তা দিয়ে ঘাট থেকে সবধরনের যানবাহন বের করে দেয়া হয়।

আরসিএল মোড় থেকে ওভারটেকিং নিষিদ্ধ। সিরিয়াল মেইনটেন করে ঘাটে ঢোকার নিয়ম। তেমনি ডান দিকের রাস্তা দিয়ে ঘাট থেকে বের হওয়ার সময় একই নিয়ম মানতে হয়। কিন্তু চালকরা যখনই এই নিয়ম ভঙ্গ করে তখনই জট বেধে যায়। বিশেষ করে কাটা বাসের চালকরা এই অনিয়মটি বেশি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রতিবার ঈদের অন্তত ৭ দিন আগে আরসিএল মোড়ের প্রায় এক কিলোমিটার আগে থেকে রাস্তায় ডিভাইডার বসানো হয়। যাতে কেউ ওভারটেক করতে না পারে। ঘাটের ছয় কিলোমিটার আগে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উথলি মোড় থেকে মোতায়েন করা হয় ট্রাফিক পুলিশ। মূলত এই ছয় কিলোমিটার আগে থেকেই ঘাট পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যানবাহন চলাচল করে।

এসময় ঘাট এলাকায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকে মোবাইল টিম। এরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়। থাকে মেডিকেল টিম।

এ বিষয়ে ঈদের কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসনের সভাপতিত্বে পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিস’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, পাটুরিয়া ঘাটে যানজট মুক্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজির ব্যাপারে তিনি বলেন, ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি। তবে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, পাটুরিয়া ঘাটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ’মোহনা’ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সেখানে সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপালন করবেন। কোনো ধরণের সমস্যা হলে তিনি পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসিসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরল ৩২০ প্রাণ 
ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরল ৪০৭ প্রাণ
‘এখন আমার কি হবে, মনুরে লইয়া কোন পথে যামু’
‘বোরকা পরে গেলেও মানুষ চিনে ফেলে’
X
Fresh