• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শরীয়তপুরে মাদকের জমজমাট ব্যবসা, ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদাররা

মো. আবুল হোসেন সরদার,শরীয়তপুর

  ৩১ মে ২০১৮, ১৪:১৪

সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে শরীয়তপুর জেলায় ছোটখাট কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের গডফাদাররা রয়েছে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত জনপ্রতিনিধি, উঠতি বয়সের যুবক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা দিনে দিনে ক্ষতাসীন হয়ে উঠছে। এক শ্রেণির যুবক ও ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু নামধারী নেতাকর্মীরা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার ও শহরের বিভিন্ন স্পটে রয়েছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। এসব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। ছেয়ে গেছে মাদকের ছোবল। ফলে তরুণ বয়সের যুবক- যুবতিরা মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ীরা ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার নরসিংহপুর আলুর বাজার, ফেরী ঘাট, মুন্সিগঞ্জ থেকে জাজিরা উপজেলার মঙ্গলমাঝির ঘাট ও মাদারীপুর থেকে সদর উপজেলার আংগারিয়া বন্দর হয়ে এ সকল মাদক জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন মালবাহী পরিহনের মাধ্যমে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক নিয়ে আসছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ সকল মাদক বিভিন্ন উপজেলা ও হাটবাজারে সুকৌশলে সরবরাহ করে থাকে কতিপয় নারী ও পুরুষ ব্যবসায়ীরা। আর এ সকল ব্যবসার খবর পুলিশ সদস্যরা জেনেও না জানার ভান করছে।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : নড়াইলে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
--------------------------------------------------------

অভিযোগকারীদের তথ্য মতে, পুলিশ ওই সকল মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয়ার কারণে এসব ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সকল মাদকের স্পটের মধ্যে রয়েছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার রাজগঞ্জ, আংগারিয়া, মনোহর বাজার, কোর্ট চত্বর, পাকার মাথা, চৌরঙ্গী, কোটাপাড়া প্রেমতলা, আটিপাড়া, বুড়িরহাট, আটং রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড ও নিরালা।

নড়িয়া উপজেলার কাঞ্চনপাড়া, পঞ্চপল্লী, উপশী, অনাখণ্ড, পাচক, কিষ্টা ডাক্তার বাড়ির মোড়, শিরঙ্গল, চাকধ, ঘড়িষার, মুলফৎগঞ্জ, বিঝারী, ভড্ডা, ঈমান খোলা, গোলার বাজার, সুরেশ্বর বাজার, দিনারা, চেয়ারম্যান বাজার, মগর, চামটা, নিলগুন, রাজ নগর, সুজাসার, লক্ষীপুরা, কদমতলী ও পণ্ডিতসার।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার, রামভদ্রপুর, সেনের বাজার, কার্তিকপুর, সাজানপুর, লাকার্তা, ভেদরগঞ্জ টেকেরহাট, এমএ রেজা কলেজের ব্রিজের পূর্বপাড়, মোল্যার বাজার, সখিপুর বাজার, গৌরাঙ্গ বাজার, চেয়াম্যান বাজার, কাচিকাটা বাজার, বালার বাজার, আলুর বাজার ফেরী ঘাট, ডিএমখালী, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারা বুনিয়া, ছয়গাও বাংলাবাজার ।

ডামুড্যা উপজেলার ডামুড্যা বাজার, উপজেলা কোয়াটার, সিড্যা, মুন্সিরটেক, ইকরি বাজার, তিন খাম্ভা, মঠেরহাট, ধানকাঠি, সিধলকুড়া বাজার, গুয়াখোলা, আমিন বাজার, ইসলামপুর, কেওড়ভাঙ্গা, পূর্বডামুড্যা, গোডাউনঘাট ও মঠেরহাট। গোসাইরহাট উপজেলার সামন্তসার, নাগেরপাড়া, কুচাইপট্রি, কোদালপুর পট্রি, চরধিপুর হাটুরিয়া, নলমুড়ি, কালিখোলা।

জাজিরা উপজেলার মঙ্গলমাঝির ঘাট, আড়াচণ্ডি মোড়, লাউখোলা, কাজিরহাট বাজার, আনন্দবাজার, বাংলা বাজার, জাজিরা বাজার, টিএন্ডটি মোড়, পালেরচর, বিলাসপুর বাজার, নাওডোবা বাজার, জয়নগর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। মাদক ব্যবসায়ীরা অভিযান শুরুর পর থেকে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কাছে মাদক বিক্রি করছে না। তারা সতর্কতার সঙ্গে মাদক ব্যসা করছে। মাদক নির্মূল অভিযানে শরীযতপুরের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

নাম না বলা সূত্রে একটি সূত্রে জানা যায়, এ সকল জায়গায় মাদক ব্যসার সঙ্গে জড়িতদের মাঝে মধ্যে ২/১টি ছোট খাট চালান ধরা পড়লে ও বড় ধরনের চালানে আসা মালামাল ছড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তদের হাতে। এ সকল মাদক সেবন করে উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীরা জীবনটাকে ধবংস করে দিচ্ছে। পাশাপাশি মাদকের টাকার অভাবে বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনকে সব শেষ করতে হচ্ছে।

আত্মীয় স্বজনদের করছে মারপিট, কুপিয়ে করছে আহত। মাদকের টাকা হাতে না থাকলে বাপ মায়ের টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যমান ঘড়ি, মোবাইলসহ ঘর থেকে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করছে। আর দিনে দিনে মাদক সেবন করে জীবনটাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদেরকে অন্দর মহল থেকে সহায়তা করছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী গডফাদার। যাদের সহায়তায় এ মাদক জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ হচ্ছে।

মাদক অভিযান শুরুর পর থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার কৌশল পরিবর্তন করে শহরতলীতে বসে মাদক লেনদেন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু ছোট খাট ব্যবসায়ীকে চাপর মুখে পুলিশ আটক করলেও তাদের থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকের বেশি অংশ বাইরে চলে যায় থানায় পৌঁছানোর আগেই।

লুকিয়ে রাখা ওইসব মাদক ব্যবহার করছে কারো প্রতি অনুরাগ বিরাগ হয়ে। উপর মহল থেকে বেশি চাপ পড়লে ছোট খাট ব্যবসায়ীকে ধরে নিজেদের থেকে সামান্য মাদক ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে আটক দেখানো হয়ে থাকে বলে একাধিক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে। এতে করে মাদক চোরাচালানের মূল গডফাদাররা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রকৃত গডফাদারদের ধরতে না পারলে বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করছে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে সুশীল সমাজের ধারণা।

প্রেমতলা এলাকার রিকশাচালক আ. রহিম খান বলেন, পুলিশের ভয়ে এখন আর কোনো মাদক ব্যবসায়ী মাদক বিক্রি করে না। রোজার আগেও কয়েকটি স্থানে মাদক বিক্রি হতো। এখন প্রকাশ্যে বিক্রি করে না।

চামটা গ্রামের জসিম মাদবর বলেন, আমাদের চামটা এলাকায় গাঁজার গন্ধে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। দূরদূরান্ত থেকে লোক এসে মাদক কিনে নিচ্ছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ আসলেও মাদক কেনাবেচা বন্ধ হয়নি।

গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া এলাকার মনির হোসেন বলেন, মাদক এখন মানুষের হাতের নাগালে। বেকার যুবক-যুবতিরা এখন এ সকল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের কতিপয় সদস্য এ সকল ব্যবসার সঙ্গে সহায়তা করছে। তাই সকলের আন্তরিকতা ছাড়া মাদক দমন সম্ভব নয়।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল মোমেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এতে সফলতা আর ব্যর্থতার কিছু নেই। ১৯ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৪৮জন গ্রেপ্তার হয়েছে। ৩০টি মামলা হয়েছে। এখনো মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন :

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঘোড়াঘাটে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ২০ 
মাদকের টাকার জন্য স্ত্রীকে ধর্ষকদের হাতে তুলে দিলেন স্বামী
রাজধানীতে গ্রেপ্তার ২৭
আখাউড়ায় ১৮০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক 
X
Fresh