• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘বন্দুকযুদ্ধে’ একরামুলের মৃত্যু নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা

শাহীন শাহ, টেকনাফ

  ২৯ মে ২০১৮, ১৮:৩৭

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য একরামুল হক (৪৬) র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে।

একরামুলকে র‌্যাব মাদক ব্যবসায়ী দাবি করলেও জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন ইয়াবা বা কোনো ধরনের মাদক ব্যবসার সঙ্গে কখনই তার (একরামুল) সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারা বলছে, সাদামাটা এ মানুষটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। টেকনাফ উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দাবি ভালো মানুষ ছিলেন একরামুল। এমন কি পুলিশও বলছে, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না।

মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শনিবার দিবাগত রাতে নিহত হন টেকনাফের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক। রোববার রাত ১০টার দিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাযায় হাজারো মানুষ উপস্থিতি দেখা যায়।

স্থানীয় ও দলীয় এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক সূত্রে বাল্যকাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন একরামুল। দীর্ঘকাল ছাত্র রাজনীতি শেষে আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন তিনি।

টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেষে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে দুইবার টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন একরামুল। যুবলীগের রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় বার বার তিন নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার দু'কন্যার মধ্যে নাহিয়ান হক ৬ষ্ঠ ও তাহিয়াত হক ৮ম শ্রেণিতে বিজিবি স্কুলে পড়ছে।

কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা হলেও অর্থাভাব ছিল একরামুলের। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া টেকনাফের কাইয়ুকখালী পাড়ায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছয় বছর ধরেও একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি অর্থের অভাবে।

একরামুলকে মাদকব্যবসায়ী দাবি করে কক্সবাজারের র‌্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানান, একরামুল মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে ছিল। এই তালিকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা। অপরাধ জগতে সে ইয়াবা গডফাদার হিসেবেও পরিচিত।

তিনি আরও দাবি করেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী দুটি মামলায় একরামুল অভিযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে টেকনাফ থানায় একটি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা রয়েছে।

তবে জানা যায়, ২০০৮ সালে দায়ের করা প্রথম মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন। আর মাদক সংক্রান্ত মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, একরামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র‌্যাবের ওই কোম্পানি কমান্ডার বলেন, আমরা তার (একরামুল) ব্যাপারে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। তিনি টেকনাফের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। র্যাব শতভাগ স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না।

তবে একরামুলের মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া আরটিভি অনলাইনকে জানান, এই থানা তার বিরুদ্ধে কোনো ইয়াবা মামলা নেই। একটি মামলা রয়েছে তাও মারামারি মামলা। তবে একরামুলের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় সঙ্গে কোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ না থাকলেও তিনি তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন।

কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সহকারী পরিচালক সোমন মণ্ডল বলেন, আমি যতদূর জানি একরামুলের নামে ডিএনসি কোনো মামলা করেনি।

ডিএনসির কোনো তালিকায় তার নাম রয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তালিকা ভালোভাবে না দেখে আমি কিছু বলতে পারব না। বিভিন্ন ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে সদরদপ্তর থেকে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

র‌্যাব কমান্ডার মেজর রুহুল আমিনের দাবি, নোয়াখালীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও র‌্যাব সদস্যদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। পরে একরামুলের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব সূত্রগুলো জানায়, শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। কিন্তু র‌্যাবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অসংগতি রয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তিতে একরামুলের ঠিকানা ও পিতার নামের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

একরামুলের ভাই নজরুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের পরিচয় দিয়ে কিছু লোক শনিবার তারাবী নামাজের পর তার ভাইকে ডেকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়, জমি কেনাবেচার ব্যাপারে তারা হোটেল নেটংয়ে একরামুলের সঙ্গে কথা বলতে চান।

কিন্তু একরামুলের ফিরতে দেরি হলে পরিবারের সবাই তাকে খোঁজাখুজি শুরু করে। প্রথমে হোটেল নেটংয়ে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, তিনি বের হয়ে গেছেন, তবে পেছনে একটি কালো রংয়ের গাড়ি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ক্রস ফায়ার হলে একটি গুলি করলে শেষ হয়ে যায়। তবে তার শরীরে বেশ গুলির আঘাত রয়েছে। পাশাপাশি নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।

একরামুলের স্ত্রী আয়েশা তার স্বামী ইয়াবা ব্যবসায়ী নন দাবি করে বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের জন্য তেলের টাকা নিয়ে তিনি বের হন। পরে আর জীবিত ফেরেননি এই মানুষটি। একরামুলের মেয়েরাও তার বাবার মিথ্যা অপবাদের বোঝা বহন করতে রাজি নয়। শিগগির সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাশার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, একরামুল দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ীর তকমা দিয়ে থাকতে পারে। যে মারামারির মামলাটি রয়েছে, তা ২০০১ বিএনপির শাসনামলে। তাও বিএনপির এক নেতা বাদী হয়ে ওই মামলাটি করেছিলেন।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মালয়েশিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে বাংলাদেশিসহ নিহত ৩
সাজেকে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধ, শিশু গুলিবিদ্ধ
X
Fresh