• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

‘ফুটকা গ্যাসে’ ঘুম ভেঙেছে প্রশাসনের, তবে …

মো. শাহাদৎ হোসেন স্বপন, নারায়ণগঞ্জ

  ২১ মে ২০১৮, ১২:২৮

অবশেষে ঘুম ভেঙেছে প্রশাসনের। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফুটকা গ্যাস বন্ধ করে দিয়েছে সরকারের কর্তৃপক্ষ। বৈধ উপায়ে সংযোগ না পেয়ে অভিনব কায়দায় ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে বিশেষ বেলুনে গ্যাস সংগ্রহ করছিলেন এ এলাকার বাসিন্দারা। যাকে স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয় ফুটকা গ্যাস।

প্রশাসন বলছে, সম্প্রতি আরটিভিতে এ সংশ্লিষ্ট নিউজ প্রকাশের পরই বিষয়টি নজরে আসে। এরপরই তা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়। আড়াইহাজার থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে ‘গ্যাস ফুটকা’ উচ্ছেদ করে দেয়।
বিশেষ করে আড়াইহাজারের লস্করদী, ভাটিগোপিন্দি ও বালিয়াপাড়া গ্রামে এমন দৃশ্য গত মাসে চোখে পড়লেও বর্তমানে তা নেই।

গত ২৯ এপ্রিল আরটিভি অনলাইনেও ‘ফুটকা’ এখন নারায়ণগঞ্জের আতঙ্ক! শিরোনামে নিউজটি প্রকাশিত হয়।

তবে ফুটকা গ্যাস দূর হলেও গ্যাস এলাকায় এখন গ্যাসের সংকট চরমে। স্থানীয়রা বলছেন, বাড়ি প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে যে গ্যাস নেয়া হয়েছে, তা এখন নামে মাত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রতি বাড়ির লোকজন ৫০ হাজার টাকা খরচ করে গ্যাস নিয়েছে। কিছু দিন গ্যাস ব্যবহারের পর সংকট দেখা যায়। গত ৬ মাস দিনের বেলায় কোনো গ্যাস ছিল না না। পরে গ্যাসের অভাবে রান্নার কষ্ট দূর করতে ফুটকা গ্যাসের উপর নির্ভর করতে হয় গ্রামবাসীকে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসন তা উচ্ছেদ করে দিয়েছে। ফলে যারা গ্যাস নিয়েছে তা নামে মাত্র। এখন বর্ষায় গ্রামবাসীকে রান্না করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ফুটকা প্রসঙ্গে আরেক স্থানীয় মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গ্যাস ফুটকা নিয়ে আরটিভিতে নিউজ প্রচার হওয়ার পর এমপি সাহেব (নারায়ণগঞ্জ-১, আড়াইহাজার) নজরুল ইসলাম বাবুল এমপি উচ্ছেদ করার জন্য প্রথম উদ্যোগ নেন। এরপর সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তা উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়।

‘তবে মানুষ টাকা খরচ করে গ্যাস নিলেও বর্তমানে গ্যাস নেই বললে চলে। এতে গ্রামবাসী খুব কষ্টে আছে।’

আড়াইহাজারের ভাটিগোপিন্দি এলাকার সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার হামিদা আক্তার জানান, এই গ্রামবাসী সবচেয়ে বেশি ফুটকা গ্যাস ব্যবহার করছিল। সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট এসে কয়েকবার উচ্ছেদ করেন এবং কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। পরে আমরাও বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বুঝতে পেরে গ্রামবাসীকে সচেতন করে তা উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। তবে কেউ যদি গোপনে ব্যবহার না করতে পারে সেজন্য জনগণকে সচেতনমূলক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু সিদ্দিক মিয়া আবুও একই কথা জানান। তবে তিনি ভবিষ্যতে এই ফুটকা আবারও ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন।

তিনি বলেন, প্রশাসন ফুটকা উচ্ছেদ করলেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করেন নাই। এতে ভবিষ্যতে পুনরায় পলিথিনে গ্যাস সংরক্ষণ অর্থাৎ ফুটকা ব্যবহার শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ান উর ইসলাম জানান, আমি কিছুদিন আগে একটি অভিযান পরিচালনা করে কিছু গ্যাস ফুটকা এবং এ কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করি।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম.এ. হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা ম্যাজিস্ট্রেটসহ লস্করদী, ভাটিগোপিন্দি ও বালিয়াপাড়া গ্রামে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। এই পর্যন্ত ওইসব এলাকায় শতাধিক বাড়ির গ্যাস ফুটকা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এমনকি কয়েকজনকে জরিমানা পর্যন্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যদি কেউ অবৈধ এই কাজে জড়িত থাকেন আমরা খবর পেলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁ বাণিজ্যিক শাখার প্রকৌশলী বাসু দেব শাহ্ আরটিভি অনলাইনকে জানান, আড়াইহাজার উপজেলার লস্করদী, ভাটিগোপিন্দি ও বালিয়াপাড়া এলাকার গ্যাস সংযোগ সম্পূর্ণ অবৈধ, আমরা ইতিমধ্যে তিন/চারটি অভিযান পরিচালনা করে যারা অবৈধ ফুটকার মাধ্যমে গ্যাস সংরক্ষণ করেছে তা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিছু অবৈধ গ্যাস লাইনও উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে তা পুরাপুরি এখনও সম্ভব হয়নি।

এসআর/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh