• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

বিড়ির নেশা ছাড়াতে শিকলে বাঁধা শিশুর শৈশব

মাজেদুল হক মানিক, মেহেরপুর

  ১৩ মে ২০১৮, ১৩:২৯

পারভেজ ওরফে পবন। বয়স ১১ বছর। মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তার বয়সী শিশু-কিশোরদের সময় কাটে রঙিন স্বপ্নে, উচ্ছলতায় ও দুষ্টুমিতে। কিন্তু পবনের ক্ষেত্রে ভিন্ন। শিকলে দুই হাত তালাবদ্ধ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে কাটছে তার সময়।

বিড়ির নেশা থেকে মুক্ত করতেই পরিবারের লোকজন এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানায় তার মা। শিকলবন্দি পবন একদিকে মানবেতর জীবন যাপন করছে অন্যদিকে পিতামাতা ভাসছেন চোখের জলে।

জানা গেছে, কাজিপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার দিনমজুর হোসেন আলীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পারভেজ ওরফে পবন বড়। চার সদস্যর পরিবার নিয়ে দিনমজুরীর আয়ে কোনো রকম সংসার চলে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে পবনকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলেন তার পিতামাতা। কিন্তু এক বছর আগে হঠাৎ সে বিড়ির নেশায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নজরে আসলে পিতামাতা তাকে নেশা থেকে ফেরাতে সব রকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ওরা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে: মঞ্জু
--------------------------------------------------------

গেলো বুধবার বিকেলে সরজমিন দিনমজুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে পবন। তার দু’হাত শিকল দিয়ে বেঁধে তাতে তালা দেয়া। খুঁটির সঙ্গেই রয়েছে বড় আরেকটি শিকল। রাতে খুঁটির শিকলের সঙ্গে তার হাতের শিকল বেঁধে রাখা হয়। কিশোর পবনের চোখে-মুখে খাঁচায় বন্দি পাখির মুক্তি প্রতীক্ষার আকুতি।

বিষয়টি জানতে চাইলে পবনের মা হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, সখ করে কেউ কি তার আদরের সন্তানকে এভাবে বেঁধে রাখে? এই বয়সে যদি বিড়ি খায় তাহলে বড় হলেতো অন্য নেশায় জড়িয়ে যাবে। তাকে ভাল করতেই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।

পবন জানায়, বছরখানেক আগে কাজিপুর সীমান্ত এলাকায় খেলতে গিয়ে সেলিম নামের এক ব্যক্তি তাকে একটি বিড়ি টানতে দেয়। প্রতিদিন খেলা করতে গেলেই সে বিড়ি দিতো। এভাবেই সে বিড়ির নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তবে এখন সে নেশা থেকে ফিরতে চায়।

পবনের মা আরও বলেন, কোনো শাসন কাজে আসেনি। মাদ্রাসায় না গিয়ে সে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে বিড়ি খেতো। বয়স্ক লোকেরা বিড়ির পোছা ফেলে দিলে পবন তাই ধরে টান দিতো। কেউ বিড়ি দিলে তার পেছনে সারাদিন ঘুরে বেড়াতো। বিড়ির নেশায় সে মারাত্মকভাবে আসক্ত। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে নেশামুক্ত করার খরচ পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, যদিও পরিবার বাধ্য হয়ে করেছে তারপরেও বিষয়টি অমানবিক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।

এবিষয়ে দ্রুত একটি ভাল ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দেন তিনি।

আরও পড়ুন :

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইটভাটা থেকে শিকলে বাঁধা শ্রমিক উদ্ধার
পুনম পাণ্ডের বিতর্কিত যত কাণ্ড
নেশার টাকার জন্য মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে আটক
‘সুর সৃষ্টির নেশায় মেতে উঠেছি, পরিচালকরা ডাকলে অবশ্যই যাব’
X
Fresh