• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

দুই বছরের বোনের অভিভাবক ৯ বছরের আলো

শিপলু জামান, ঝিনাইদহ

  ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ১৪:১১

হাসপাতালের শয্যায় দুই বছর বয়সী ছোট বোন আঁখির মাথায় হাত রেখে বসে আছে নয় বছর বয়সের বড় বোন আঁখি। বড়দের মতো বোনের দেখভালও করছে সে। বাবা নেই। মা ঝি-এর কাজ করতে অন্যের বাড়িতে গেছেন। তাই এই একটুখানি বয়সেও গুরুদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আলোকে।

গতকাল শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, গেলো বৃহস্পতিবার রাত থেকে পেটে ব্যথা করছিলো আঁখির। শুক্রবার সকালে মা নাজমা খাতুন (৩০) আঁখিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সঙ্গে আলোও আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অরুণ কুমার আঁখিকে ভর্তি করে নেন।

গতকাল সকালের দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক শম্পা মোদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি আরটিভি অনলাইনকে জানান বর্তমানে আঁখির অবস্থা ভালো। তিনি আশা করছেন আঁখি দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে।

আলো জানায়, এক বছর আগে তার বাবা আলম শেখ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারপর মা সংসারের হাল ধরেন। অন্যের বাসায় বাসায় কাজ করেন। আর বাজারের দশটি দোকানে তিন বেলা পানি সরবরাহ করেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের মা-মেয়ের সংসার।

আলো আরও জানায়, তাদের আরেকটি বোন আছে। নাম আরিফা(৮)। সে ও আরিফা দুজনেই উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

তারা যখন স্কুলে থাকে তখন মা ছোট বোন আঁখিকে দেখাশুনা করেন। স্কুল ছুটি হলে তারা দুইজনই আঁখিকে দেখভাল করে থাকে।

আলো বলে, মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে। মায়ের জন্য খুব কষ্ট হয়।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : চিকিৎসক লাঞ্ছিত, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ
--------------------------------------------------------

পড়াশুনা করে একদিন ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আলোর। যেন বাবার মতো বিনা চিকিৎসায় পরিবারের আর কাউকে মরতে না হয়। আলোর মা নাজমা কাজ শেষে হাসপাতালে আসলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি আরটিভি অনলাইনকে জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার পশু হাসপাতাল পাড়ায় মাসিক ৩৫০ টাকা চুক্তিতে এক খণ্ড জমি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি একটি খুপরি ঘরে তিন মেয়ে আলো, আরিফা ও আঁখিকে নিয়ে থাকেন তিনি।

প্রায় ১৪ বছর আগে কুষ্টিয়ার রাহিনী পাড়ার আলম শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। স্বামী পুরাতন কাগজ কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন।

হঠাৎ কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলো রমজান মাসে মারা যান আলম শেখ। সংসারের ভার তার উপর বর্তায়। প্রথমে উপজেলায় কয়েকজনের রান্নার কাজ নেন। কিন্তু সেখান থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলছিল না।

পরে ওই কাজ ছেড়ে দুইটি বাসায় কাজ নেন, সঙ্গে কয়েকটি দোকানে পানি সরবরাহের কাজ শুরু করেন। এতে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়। এই স্বল্প আয়েই কোনোরকম চলে যায়।

নাজমা বলেন, মেয়ে দুটো পড়তে চায়। তাই তাদের স্কুলে পাঠাই। কিন্তু কতদিন তাদের পড়াতে পারবো কে জানে? প্রশ্ন নাজমার।

নাজমার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার গান্না গ্রামে। বাবা-মা দুজনই জীবিত আছেন। তারাও দিন আনে দিন খায়।

একটু থেমে নাজমা বলেন সমাজের বিত্তবানেরা এগিয়ে আসলে হয়তো মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারতাম।

আরও পড়ুন :

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নৌকা থেকে নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজ
শিশু হত্যা মামলায় বৃদ্ধের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 
নোয়াখালীতে রেজাল্ট শিট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
নোয়াখালীতে ধান কাটার মেশিনের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
X
Fresh