• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘চাকরির আশ্বাসে’ ভিসির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাহার!

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ২০:৩৮

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চাকরি দেয়ার কথা বলে চাকরি দেননি। এজন্য ক্ষুদ্ধ হয়ে স্যারের বিরুদ্ধে এসব (যৌন হয়রানির অভিযোগ) কথা বলেছি। আসলে স্যার খুব ভাল মানুষ। আমাকে ‘চাকরি দেবেন বলে আশ্বাস’ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে একথা জানান নারী কর্মচারী আফরিদা খানম ঝিলিক।

ঝিলিক বলেন, ভিসি স্যার আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে চাকরি দেননি। এজন্য ক্ষুদ্ধ হয়ে স্যারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কথা বলেছি। আমি ওই দিনের বক্তব্য প্রত্যার করে নিয়েছি। ভিসি স্যার ভাল মানুষ।

ভিসির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যে অভিযোগ করেছিলেন আফরিদা খানম ঝিলিক তা কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে প্রত্যাহারের ঘটনা নিয়ে সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

অভিযোগ রয়েছে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে ঝিলিককে দিয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ‘আমার সন্তানের বাবা ভিসি’ জানালেন মাস্টাররোলে কর্মরত নারী
--------------------------------------------------------

গেল সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার মোঃ নাসির উদ্দিনের যৌন কেলেঙ্কারির রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারাদেশ জুড়ে ওঠে আলোচনার ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরে বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা করতে দেখা যায়। ঘটনার নিন্দা জানান অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, ভিসিকে নিয়ে যে ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে তার সত্যতা রয়েছে। এই ভিসির জন্য আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। অযোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। সেইসাথে ভিসিকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমাদের লজ্জার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে, গোপালগঞ্জের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দাবী করেন যে, আফরিদা খাতুন ঝিলিকের প্রচারিত বক্তব্য যদি অসত্য হয়, তবে তাকে আইনের আওতায় না এনে কেন চাকরির প্রস্তাব দেয়া হলো? এমন অসৎ ব্যক্তিদের যেন চাকরিতে না নেয়া হয় এমন দাবিসহ তারা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, শিশুটির পিতৃত্ব নির্ধারণে ডিএনএ টেষ্ট করা হোক। এত বড় অভিযোগ শুধুমাত্র চাকরির আশ্বাস ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, আফরিদা খাতুনের বক্তব্যে ভিসির মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তাছাড়া আফরিদা খাতুনকে অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে চাকরি দেয়ার যে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে তাও যুক্তিসংগত নয়। বরং অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে কথা বলেছিলেন নারী কর্মচারী। ঝিলিক।

নিজের সন্তানের বাবা ভিসি দাবি করে গেলো রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভিসির অফিস কক্ষের সামনে শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান ঝিলিক। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে এমএলএসএস হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত।

গেলো ২২ এপ্রিল ২১ মিনিটের ভিডিও ক্লিপ ও ২৩ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঝিলিক তার এক বছর বয়সী কন্যাসন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। এসময় তিনি ভিসিকে তার সন্তানের বাবা দাবি করে চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘এ সন্তান ওনার, এ সন্তানের সঙ্গে ওনার চেহারার অনেক মিল আছে। এসময় ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দীন তার লোকজন দিয়ে ঝিলিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে দীর্ঘসময় আটকে রাখেন। এদিকে ভিসির নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।

আফরিদা খাতুন ঝিলিকের আর্তনাদের ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপে আরও দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন চাকরি দেয়ার কথা বলে তাকে বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানি করেছেন, এমন অভিযোগ ঝিলিকের। এছাড়া সহায় সম্পত্তি করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান ও ভালোবাসার ছলনায় প্রলুব্ধ করে দিনের পর দিন তার বাংলোয় রেখে তাকে ব্যবহার করেন।

নির্যাতিত ঝিলিক বলেন, আজ আমি সবকিছু ফাঁস করে দেব। খুলে দেব মানুষ নামের নরপশুর মুখোশ। এছাড়া ভিসিকে তার কন্যা সন্তানের বাবা হিসেবে দাবি করেন। এসময় তিনি দাবি করেন, আমার কাছে এমন সব ভিডিও ক্লিপ আছে যা আমার দাবিকে প্রমাণ করবে।

‘তুমিও এতিম আমিও এতিম, তুমি আমার কষ্ট বুঝবে-আমি তোমার কষ্ট বুঝব’ এমন সব আবেগী বক্তব্য দিয়ে ঝিলিককে ব্ল্যাকমেইল করেন ভিসি।

পরে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ঝিলিককে ভোগ করেন ভিসি নাসির। একপর্যায় তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তখন গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন ভিসি। কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে অস্বীকার করেন ঝিলিক। ফলে ঝিলিককে চোর অপবাদ দিয়ে বাংলো থেকে বের করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ঝিলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্বে অবস্থিত সোনাকুড় গ্রামে বাসা ভাড়া নিলে ভিসি তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ঝিলিককে মারপিট করায় এবং তাকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে।

ঝিলিকের অভিযোগ, পরবর্তীতে একটি সমঝোতার মাধ্যমে ঝিলিককে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা প্রদানের অঙ্গীকার করেন ভিসি নাসির। ঝিলিকের ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোন নম্বরে বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ওই টাকা পাঠিয়ে দেয়া হতো। সর্বশেষ গেলো ২৪ মার্চ বিকাশের মাধ্যমে ঝিলিককে আট হাজার টাকা পাঠানো হয়। ভিসির আস্থাভাজন ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রশাসনিক একজন কর্মকর্তা এ দায়িত্ব পালন করতেন।

তিনি ওই দিন বলেছিলেন, প্রয়োজনে গণমাধ্যমের দারস্থ হবেন। জীবনযুদ্ধে পরাজয় মানতে নারাজ তিনি। সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ভিসি নাসিরের বিরুদ্ধে নালিশ জানাবেন এবং প্রতারণার বিচার চাইবেন বলেও জানান ঝিলিক।

আরও পড়ুন :

জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গোপালগঞ্জে বোমা হামলায় বাবা-ছেলে আহত
বশেমুরবিপ্রবিতে ভার্চ্যুয়ালি ক্লাস, বন্ধ থাকবে সকল পরীক্ষা
থ্রি-হুইলার ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১ 
গোপালগঞ্জে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৪০
X
Fresh