• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কয়লার ইস্ত্রিতে ভাগ্য ফিরলো শুকুর আলীর

বেনাপোল সংবাদদাতা

  ২৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৫০

একসময় সংসার চালানোই কঠিন ছিল শুকুর আলীর। এখন তার আছে ধানের জমি। ছেলে পড়ালেখা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসারে এসেছে সুখের আলো। একটি কয়লার ইস্ত্রি দিয়েই তিনি ভাগ্য বদল করেছেন।

যশোরের শার্শা উপজেলার বসতপুর এক নম্বর কলোনি এলাকার বাসিন্দা শুকুর আলী। গ্রামে বিদ্যুত নেই। স্বাধীনতার পরপরেই ছোট ভাই ১২শ’ টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে একটি কয়লার ইস্ত্রি এনে দেন। এরপর থেকে সেই ইস্ত্রি দিয়ে লন্ড্রির কাজ শুরু করেন তিনি। এখনো করে চলেছেন একই কাজ।

শুকুর আলীর বাবা আব্দুর রহিম মিজি ও মা নূরজাহান বেগম কেউ বেঁচে নেই। গ্রামের বাজারের মধ্যে ছোট একটি দোকান। তার মধ্যে দুটো টেবিল আর দেওয়াল ঘেঁষে জমিয়ে রাখা হয়েছে কয়লা। এই কয়লার আগুন ইস্ত্রির ভেতর ঢুকিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করেন শুকুর আলী। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এ কাজ করে চলছেন। এ আয় দিয়েই কিনেছেন দুই বিঘা ধানের জমি। ছোট ছেলে জামির হোসেনকে পড়াচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : উনচিপ্রাংয়ে পাহাড় কাটার মহোৎসব, প্রশাসন নির্বিকার
--------------------------------------------------------

শুকুর আলী (৬২) আরটিভি অনলাইনকে জানান, দেশ স্বাধীনের ৯-১০ বছর পর ছোট ভাই মনসুর আলী চট্টগ্রাম থেকে পিতলের তৈরি কয়লার ইস্ত্রি নিয়ে আসে। সেই থেকে বসতপুর বাজারে কাপড় ইস্ত্রির কাজ শুরু। এখনো চলছে।

বছর দুই আগে বসতপুর বাজারে ছোট একটি দোকান ভাড়া নেন তিনি। মাসে ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া আর পাশের দোকান থেকে লাইন টেনে একটি বাল্ব জ্বালান।

এর আগে তিনি বাজারের বিভিন্ন দোকানের সামনে লোকজনকে বলে একটু জায়গা নিয়ে এ কাজ করতেন।

তিনি আরটিভি অনলাইনকে জানান, ইস্ত্রির কাজ শুরুর বছর খানেক পর বেনাপোল পোর্ট থানার ঘিবা গ্রামের জবেদা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। সংসার জীবনে তার দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। দুটো মেয়ে ও বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে জামির হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিবিএ অনার্স পাস করেন) পড়াশোনা করেন। এ মাসে তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা দেবেন।

তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে কাপড় প্রতি আটআনা পরে একটাকা করে নিতেন। এখন পাঁচ টাকা। আর শাড়ি প্রতি দশ টাকা। তখন প্রতিদিন ২০-৫০ টাকা আয় হতো। সংসার চলে যেতো। বিয়ের পর বাড়িতে হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালতেন স্ত্রী। সংসারের খরচ থেকে টুকটাক জমিয়ে প্রথমে কেনেন পাঁচ কাঠা জমি। এরপর আবার কিছু সঞ্চয়। তারপর আস্তে আস্তে এখন দুই বিঘা ধানের জমির মালিক শুকুর আলী। সেই জমিতে নিজেরাই উৎপাদন করেন ধান। এতে তাদের বছরের খোরাকি চলে যায়।

শুকুর আলীর জীবনে একটিই চাওয়া ছিল অন্তত একটা ছেলেকে তিনি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন। তার সেই ইচ্ছা এখন পূরণের পথে। ছোট ছেলে জামির হোসেন লেখাপড়ায় বেশ ভালো। এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিসিএস পরীক্ষার। শুকুর আলী চান ছেলে একটি ভালো চাকরি জুটিয়ে পরিবারের হাল ধরবে।

শুকুর আলীর ছেলে জামির হোসেন আরটিভি অনলাইনকে জানান, বাবা হচ্ছেন সহজ-সরল মানুষ। খুবই সৎ আর কর্মঠ। কখনো তিনি কোনো বিষয়কে জটিল করে দেখতে চান না।

জানা যায়, এলাকায় কোনো বাড়িতে বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান হলে তিনি সেখান থেকে বস্তায় ভরে কয়লা সংগ্রহ করেন। কয়লার সংকট দেখা দিলে বস্তা প্রতি ১৬০ টাকা দরে কেনেন। ইস্ত্রি কেনার পর একবার হাত থেকে পড়ে কাঠের হাতলটি ভেঙে যায়। ওই একবারই সেটি মেরামত করতে হয়েছে। এছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি।

প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষক আবু আব্দুল্লাহ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মানুষটা খুব নিরীহ। কারো সঙ্গে কোনোদিন উচ্চস্বরে কথা বলেননি। সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে সততার জন্য। এই বাজারে একমাত্র তারই ইস্ত্রির দোকান রয়েছে। বসতপুর ছাড়াও আশপাশের গ্রামের লোকজন তার কাছে কাপড় ইস্ত্রি করতে আসেন।

আরও পড়ুন :

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh