কবিরাজের কথায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ শিশুদের
জলাতঙ্ক রোগের ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গন্ডিমসারা গ্রামের মানুষ। প্রাণভয়ে ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া, গুড়পড়াসহ নানা অপচিকিৎসা শুরু করেছেন তারা।
শুধু তাই নয়, জলাতঙ্কের ভয়ে গ্রামের শিশুদের স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না অভিভাবকরা। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ভুল ভাঙাতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের।
সরেজমিনে গন্ডিমসারা গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, গন্ডিমসারা গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই নিরীহ আর সহজ-সরল প্রকৃতির। এই গ্রামের প্রভাষ চন্দ্র নামে এক ব্যক্তিকে গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে কুকুরে কামড়ানোর পর গেলো ১৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুর পর এক গণক কবিরাজ ওই গ্রামে এসে জানান, গ্রামের শিশু-নারী-পুরুষ সবার শরীরে মৃত প্রভাষকে কামড়ানো কুকুরের বিষ প্রবেশ করেছে।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: শিশুর সুন্দর নাম তার জন্মগত অধিকার
--------------------------------------------------------
গন্ডিমসারা গ্রামের শিবেন দেবনাথ, বাচ্চু মণ্ডল, মিলন ইসলামসহ গ্রামবাসীরা বলেন, গণক কবিরাজের এমন কথায় ভয় পেয়ে সবাই ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া, গুড়পড়াসহ নানা প্রকার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কবিরাজের দাবি যেকোনো উপায়ে অল্প সময়ের মধ্যে এই বিষ ছড়ালে আক্রান্ত সবার মৃত্যু হবে। তাই তারা তাদের সন্তানদের বিষ থেকে রক্ষা করতে বাড়ির বাইরে বের হতেও দিচ্ছেন না।
গন্ডিমসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণকান্তি সরকার আরটিভি অনলাইনকে জানান, এ কারণে তার বিদ্যালয়সহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশঙ্কাজনকভাবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।
মৃত প্রভাষের স্ত্রী অর্চণা রানী আরটিভি অনলাইনকে জানান, একদিকে জলাতঙ্ক রোগের গুজবে মৃত্যু ভয়ে গ্রামবাসীদের নির্ঘুম অবস্থা, অন্যদিকে তাদের পরিবারের সঙ্গে গ্রামের মানুষ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। গুজবের কারণে এখন তারা একঘরে হয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে ধর্মগুরু আর কবিরাজের প্রতি চরম ভক্তি-শ্রদ্ধা আর ভয়ে তার পরিচয় জানাননি গ্রামবাসী।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাধেশ্যাম আগরওয়ালা ও আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রামবাসীদের এই ভীতি কাটাতে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। পাশাপাশি গুজব ছড়ানো সেই কবিরাজের খোঁজ করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
এসএইচ/জেবি
মন্তব্য করুন