• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

পাঁচ কোটি টাকার গাছ কোটি টাকায় বিক্রি

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

  ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:০১

মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজে প্রায় চার হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব গাছের বাজারমূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। তবে বাজারমূল্য থেকে অনেক কম দামেই গাছগুলো বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ। এরইমধ্যে প্রায় এক হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে ১০ সমিতির সদস্যরা উপজেলার জয়মন্টপ থেকে ডেফলতলি সড়ক পর্যন্ত ১০ হাজার গাছ রোপণ করে। বর্তমানে চার হাজার গাছ আছে। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে মেহগনি, কড়ই, শিশু ও ইউক্লিপ্টাস প্রভৃতি। উপজেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে সমিতির অনেক সদস্য গাছগুলো রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিলেন। এজন্য প্রথম তিন বছর প্রত্যেক সদস্যকে প্রতিদিন পাঁচ কেজি করে গম দেয় প্রশিকা। উপজেলা পরিষদ ও সংস্থাটির লিখিত চুক্তি অনুযায়ী, সমিতির সদস্যরা গাছ বিক্রি লাভের ৬০ ভাগ, প্রশিকা ২০ ভাগ এবং বাকি ২০ ভাগ উপজেলা পরিষদ পাবেন। তবে গাছ বিক্রির বিষয়টি কোনো পক্ষকেই জানানো হয়নি। গাছ বিক্রির কোনো টাকাও তারা পাননি।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: পাইপগানসহ জেএমবি সদস্য আটক
--------------------------------------------------------

জেলা পরিষদ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার জরিনা কলেজ মোড় পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি ১৭ ফুট চওড়া। এটি প্রশস্ত করে ২৮ ফুটে উন্নীত করা হবে।

জেলা পরিষদের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক মহাসড়কটির প্রশস্ত করার জন্য দরপত্রের মাধ্যমে এসব গাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। গেলো বছরের ৬ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী তিন হাজার ৭২৫টি গাছ ২৮টি প্যাকেজে বিক্রি করা হয়। দরপত্রের শর্তানুযায়ী সর্বোচ্চ দর এক কোটি ৩৬ লাখ ১৪ হাজার ১৩৯ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করা হয়। মূসকসহ এর দর দাঁড়ায় এক কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৭ টাকা।

সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান খান বলেন, ১৯৯১ সালের চুক্তি অনুযায়ী গাছগুলোর মালিক উপজেলা পরিষদ, প্রশিকা এবং সুবিধাভোগীরা। সেসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। গাছ বিক্রির লাভের অংশ চুক্তি অনুযায়ী যারা প্রাপ্য তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া উচিত। তবে বাজার দরের চেয়ে গাছগুলোর মূল্য বেশ কম।

বিভিন্ন সমিতির সদস্যরা জানান, প্রায় ২৭ বছর ধরে তারা গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। শতকরা ৬৫ ভাগ লাভ তাদের পাওয়ার কথা থাকলেও গাছ কাটার বিষয়ে তাদেরকে জানানো হয়নি। তাদেরকে কোনো টাকাও দেয়া হয়নি।

তারা অভিযোগ করেন, বাজার দরের চেয়ে গাছগুলো অনেক কম মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। এতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন।

এদিকে গাছ বিক্রির প্রাপ্য লাভের অংশ পাওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাড়াদিয়া এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সমিতির সদস্যরা। এর আগে বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটতে শ্রমিকদের বাঁধা দেন তারা। তবে এরইমধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক গাছ কাটা হয়েছে।

প্রশিকার সিঙ্গাইর উপজেলা সমন্বয়ক মহিদুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বর্তমানে চার হাজারের বেশি গাছ রয়েছে। বাজার দর অনুযায়ী এসব গাছের মূল্য ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে এসব গাছের বাজারমূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। অথচ বিক্রি করা প্রতিটি গাছের গড় মূল্য তিন হাজার ৬৭৫ টাকা ধরা হয়েছে। কম মূল্যে গাছ বিক্রির ফলে সরকার, প্রশিকা ও সুবিধাভোগীদের বেশ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী গাছ বিক্রির লাভের টাকার অংশ তাদেরকে (সুবিধাভোগী ও প্রশিকা) দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

প্রশিকার প্রধান নির্বাহী এবং তৎকালীন প্রশিকার সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির পরিচালক কাজী খাজে আলম জানান, সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী রোপণকৃত গাছের চারার যত্ন ও পরিচর্যার জন্য প্রশিকার সমিতির অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা পাবে লাভের শতকরা ৬৫ ভাগ, প্রশিকা পাবে ২০ ভাগ এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ পাবে ১৫ ভাগ।

তিনি আরও জানান, নির্দিষ্ট সময়ের আগে গাছ কাটতে গেলে বা তা বিক্রি করতে গেলে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রশিকা, প্রশিকার সমিতির সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং মতামত নেয়া বাধ্যতামূলক। অথচ এই ক্ষেত্রে এর একটিও মানা হয়নি। কাজেই গাছ কাটার প্রক্রিয়াটি বৈধ হয়নি।

তিনি বলেন, প্রশিকার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পরিষদকে জানানো হবে। এতে যদি কোনো সুরাহা না হয়, তাহলে আইনের আশ্রয় নিবে প্রশিকা।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের প্রশাসক গোলাম মহীউদ্দিন বলেন, সমিতির সদস্যরা ও প্রশিকা গাছ বিক্রির টাকার ভাগ পেলে তাদেরকে (সুবিধাভোগী ও প্রশিকা) দেয়া হবে। এ বিষয় যাচাই-বাছাই করা হবে।

বাজারমূল্যের চেয়ে কম মূল্যে গাছ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, গাছ বিক্রির জন্য জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। নিয়মানুযায়ী দরপত্র আহ্বান এবং সর্বোচ্চ দরেই এসব গাছ বিক্রি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

এসএস/জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আ.লীগ কর্মী নয়লাল হত্যার বিচারের দাবিতে মানবন্ধন 
X
Fresh