অধ্যক্ষ বটে!
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী সপ্তগ্রাম মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম।
তিনি স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিনি ১৯৯২ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কাঠালতলী সপ্তগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে পর্যায়ক্রমে প্রধান শিক্ষক হন।
এরপর ২০১১ সালে বর্তমান সরকার বিদ্যালয়টিকে কলেজে রূপান্তরিত করলে তিনিও প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হন।
অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ২০১৭ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে যে অর্থ নিয়েছেন তা স্কুলের কোনো ক্যাশবহিতে লিপিবদ্ধ করেননি।
এছাড়া ৩০ জনের অধিক এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করেছেন তিনি।
সরকারের নির্ধারিত ফি তিনি কাগজ কলমে দেখালেও বাড়তি অর্থ নিজেই গ্রাস করেছেন।
এসব বিষয়ে এলাকাবাসী বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন এবং সাংবাদিকদের কাছে অনুলিপি দেন।
তাদের অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে কয়েকজন জেএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় আরটিভি অনলাইনের।
পরীক্ষার্থীরা বলেন, জেএসসি পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫০০ টাকা, ফরম পূরণের জন্য ৫০০ টাকা এবং কেন্দ্র ফি বাবদ ৩০০ টাকা নেন অধ্যক্ষ। কারো কারো কাছ থেকে এরচে বেশি টাকাও নেয়া হয়েছে।
কাঠালতলী সপ্তগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে গেলে সেখানে ২০-২৫ জন পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়।
শিক্ষকের সামনে টাকা বেশি নেয়ার ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলেনি।
ভবনের নিচের তলায় অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থী এসে হাজির হয়।
তারা জানান, তাদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যক্ষ স্যার পরীক্ষার হল সুপার।
টাকা বেশি নেয়ার কথা বললে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
অভিযোগে আরো বলা হয় নজরুল ইসলাম প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেন। কোনো পাঠদান করেন না। শিক্ষকদের অশালীন ভাষায় কথা বলেন।
এর আগে নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান তাকে শাস্তি দেন।
এমন আরেকটি ঘটনায় চেয়ারম্যান মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।
শুধু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই মোটা অংকের টাকা উত্তোলন নয় বরং শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে তিনি সমান সিদ্ধহস্ত।
প্রতিষ্ঠান থেকে বের হেয় আসার পরে কাঠালতলী বাজারে দেখা হয় বিধান চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে।
তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, তাকে সপ্তগ্রাম মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজের মাধ্যমিকের কোটায় সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন অধ্যক্ষ।
তিনি আরো বলেন, মোটরসাইকেল, স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি এবং ধার করে তিন লাখ টাকা অধ্যক্ষকে দিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই পদে অন্য আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গোলাম রসূল নামে অপর একজনকে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রথমে দেড় লাখ টাকা নেন অধ্যক্ষ।
পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের অডিট হওয়ায় পরে নজরুল ইসলাম তাকে বলেন, আপনার কাগজপত্রে সমস্যা আছে। এরপর আরো ৮০ হাজার টাকা নেন। চাকরির সঠিক কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে তিনি অব্যাহতি দিয়ে চলে আসেন। টাকা চেয়েও আর ফেরত পাননি। অথচ তার কাগজপত্রে কোনো সমস্যা ছিল না।
এ পদে এমাদুল হক নামে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
এমাদুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, চাকরির জন্য স্কুলের নামে ছয় কাঠা জমি এবং বিভিন্ন জায়গায় খরচ বাবদ চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা আমার কাছ থেকে নেন অধ্যক্ষ।
সপ্তগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মুসা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা তেমন কোনো টাকা-পয়সা দেইনি। বিল করানোর জন্য আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকেও ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অধ্যক্ষের চরিত্র খারাপ। বেশি টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি চাঁদাবাজি মামলার হুমকি দেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান পান্না আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অধ্যক্ষ একজন অর্থলোভী মানুষ। আমাদের না জানিয়ে ৩০ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
মঠবাড়িয়াতে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কোটি টাকার মূল্যের একটি বাড়ি করেছেন। তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষককে সরিয়ে দিয়েছেন।
তার স্থানে আরেকজন নিয়োগ দিয়ে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
অভিযোগ বিষয়ে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক জনাব মো. মোখলেছুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে জানান, নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এদিকে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির আরটিভি অনলাইনকে বলেছেন, আমি ট্রেনিং শেষে ঢাকা থেকে ফিরছি।
জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি আমাকে ফোনে অবহিত করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি।
জেবি/এসজে
মন্তব্য করুন