• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর

পাথর শিল্পে দিনে ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

রাজিউর রহমান রাজু

  ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৪৫

ভারত থেকে আমদানি করা পাথরের গাড়িতে অবৈধভাবে মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ (গাড়ির স্প্রিং পাতি) আনার ঘটনার জেরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে গেলো এক সপ্তাহ পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।

এতে করে সরকার এ বন্দর থেকে দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি কাজ না থাকায় বন্দরের পণ্য উঠা-নামার (লোড-আনলোড) সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ মাসে বন্দরটি দিয়ে ৫ লাখ ১৫ হাজার টন পাথর আমদানি হয়েছে। প্রতি ৫০০ টন পাথর আমদানির বিপরীতে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৩১ টাকা নিয়মিত শুল্ক আদায় করে সরকার।

স্থলবন্দরের এক রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, এ বন্দর দিয়ে পাথরই সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়। যতদিন পাথর আমদানি বন্ধ থাকবে ততদিন এ খাতে রাজস্ব আদায় হবে না। ফলে বড় অঙ্কের অর্থ হারাবে সরকার।

কাস্টমস আইনের শর্তানুযায়ী আমদানি করা মালামাল প্রথমত স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে রাখার নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানি করা পাথর বন্দর প্রক্রিয়া শেষ করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এর নির্ধারিত সীমানার মধ্যে আনলোড করে আসছে। গেলো ৩১ অক্টোবর একটি পাথরবোঝই ট্রাকে অবৈধভাবে ২০ টন মোটর যন্ত্রাংশ পাচার করার সময় বাংলাবান্ধা বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে এই মালামাল পাচারের ঘটনা নিয়ে বন্দরে তোলপাড় শুরু হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের ইয়ার্ডে মালামাল আনলোড করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের এই নির্দেশনাকে বাস্তব সম্মত নয় এমন অভিযোগে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

এ ঘটনায় স্থলবন্দর কাস্টমসের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাবান্ধা কাস্টমস সুপার ফিরোজ আলমকে পঞ্চগড় অফিসে এবং কাস্টমস পরিদর্শক হামিদুর রহমানকে ঠাকুরগাঁও এ বদলি করা হয়।

প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ পণ্যবাহী ট্রাকে ভারতীয় পাথর আসে এই বন্দর দিয়ে। কিন্তু পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরটি।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হলেও কোনো পক্ষই এখনো সমঝোতায় আসেনি।

বাংলাবান্ধার সিএন্ডএফ এজেন্ট শাকিল মাহমুদ বলেন, আমরা পাথর আমদানি করার পর কাস্টমসের কার্যক্রম শেষে বিজিবির নির্ধারিত সীমানার মধ্যেই আনলোড করে আসছি। হঠাৎ আমাদের বন্দর ইয়ার্ডেই পণ্য আনলোডের শর্ত জুড়ে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এভাবে লোড আনলোড করতে আমাদের খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এছাড়া বন্দর ইয়ার্ডে যথেষ্ট জায়গাও নেই। আমরা ব্যবসায়ীরা লাভ তো দূরের কথা চরম লোকসানে পড়বো। তাই পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি।

আমদানিকারক ফরমান আলী বলেন, আমাদের স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সহায়তায় বাইরের লোক এসে এখানে অবৈধভাবে মাল আনার সাহস পায়। আর এজন্য এখন আমাদের সব ব্যবসায়ীকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা চাই এই বন্দর দিয়ে সঠিকভাবে আমদানি-রপ্তানি হোক এবং বন্দরটির উন্নতি হোক। বন্দর আবার তার প্রাণ ফিরে পাক। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি মানে তো সরকারেরও ক্ষতি।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতি এলসিতে আউটপাস করাতে পাঁচ হাজার টাকা নিচ্ছে কাস্টমস। কিন্তু এটা কেন? তারা কি সরকারের কাছ থেকে বেতন পান না? হঠাৎ করে কাস্টমস এখন বন্দরের ইয়ার্ডেই মালামাল আনলোড করার শর্ত দিয়েছে। সেখানে মালামাল আনলোড করলে আমাদের পরিবহন খরচ ও শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণ দিতে হবে। এভাবে তো আমরা ব্যবসা করতে পারবো না।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আকতারুল ইসলাম বলেন, এই বন্দরে আমদানি করা পাথর শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৫ হাজার মানুষ জড়িয়ে আছে। পাথর না আসায় আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সব শর্ত আমরা মেনে নিতে রাজি। কিন্তু আমাদের বিষয়টিও তাদের দেখতে হবে। এক হাজার মেট্রিকটন পাথর আমদানি করে আমাদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। এখন যদি ইয়ার্ডেই মাল উঠা-নামা করতে হয় তাহলে আমাদের লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে হবে।

তিনি বলেন, আমি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ভেহিক্যাল স্ক্যানার নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। আগামী রোববার তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

তবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আ.ক.ম. বজলুর রশীদ বলেন, আমরা তো কাউকে পাথর আমদানি করতে নিষেধ করিনি। আমরা বন্দর ইয়ার্ডের মধ্যেই মালামাল আনলোড করতে বলেছি। এতে তারা যদি আমদানি বন্ধ করে দেয় আমাদের কিছু করার নেই।

সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পণ্য আমদানি হলে সরকার রাজস্ব পাবে। আমদানি না হলে পাবে না।

এসআর

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাথরঘাটায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ জাল পুড়িয়ে ধ্বংস  
পাথরঘাটায় শূকরের কামড়ে নারীসহ আহত ৫
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
X
Fresh