বখাটের যন্ত্রণায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

এক বখাটে যুবকের যন্ত্রণায়-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রাজিফা আকতার সাথী (১৪) নামে মেধাবী স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।

রোববার সন্ধ্যায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।

রাজিফা আকতার সাথী জিয়ানগর গ্রামের ক্ষুদে ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানীর মেয়ে। সে স্থানীয় জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। ক্লাসে সে ফার্স্ট গার্ল ছিল।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযুক্ত হুজাইফা ইয়ামিন (১৯) নামের ওই বখাটে যুবককে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ রোববার রাত সাড়ে ৭টার দিকে পার্শ্ববর্তী হেরুঞ্জ গ্রামে অভিযান চালায়। কথন পুলিশের ওপর হামলা চালায় গ্রামবাসী। এতে তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

এছাড়া হামলাকারীরা পুলিশের একটি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ দ্বিতীয় দফা ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২৬ জনকে আটক করেছে। তবে বখাটে যুবককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্কুলছাত্রীর আত্মহনের খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৭টায় তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন।এরপর অভিযোগ পেয়ে বখাটে যুবককে গ্রেপ্তার করতে পাশের হেরুঞ্জ গ্রামে গেলে পুলিশকে বাধা দেয় গ্রামবাসী ।এক পর্যায়ে তারা হামলা চালায়। এতে নাসিরুজ্জামান, রহিম উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে পুলিশের তিন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামান্য আহত হন। কয়েক ঘণ্টা পর অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে আবার ওই গ্রামে অভিযান চালায়।

আত্মহননকারী স্কুলছাত্রীর বাবা গোলাম রব্বানী জানান, বখাটে যুবক হুজাইফা ইয়ামিন তার মেয়েকে পথে-ঘাটে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় একাধিকবার সালিশ-বৈঠক করা হলেও ওই বখাটেকে নিবৃত্ত করা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘রোববার বিকেলে সাথী বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যার কিছু আগে আমার মেয়ে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন রাস্তায় ওই বখাটে আবার আমার মেয়ের পিছু নেয় এবং কটূক্তি করে। এতে আমার মেয়ে অপমানিত বোধ করে তবে কাউকে কিছু না বলেই সে বাড়ি ফিরছিল। আমি তখন জিয়ানগর বাজারেই ছিলাম। আমার সামনে দিয়ে যাবার সময় সাথী আমাকে বলেছিল, আব্বা আপনি তাড়াতাড়ি বাড়ি আসেন তো আপনার সাথে কথা আছে’। তখন আমি তাকে বলেছিলাম ঠিক আছে মা তুমি যাও আমি আসছি।’

জিয়ানগর বাজারের মাছ ধরার জাল বিক্রেতা গোলাম রব্বানী জানান, সাথী বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে গিয়ে ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলে পড়ে। এতে সঙ্গে সঙ্গে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘পরে বাড়ি থেকে আমাকে খবর দেয়া হয় যে সাথী আত্মহত্যা করেছে’।

জিয়ানগর গ্রামের বাসিন্দা নাসিমুজ্জামান রিফাত জানান, দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট সাথী খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল।

তিনি বলেন, ‘সাথীকে তার বাবা দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে (ইংলিশ মিডিয়াম) ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে সাথীর বাবা আর মেয়েকে ওই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে আর পড়াতে পারেননি। পরে তাকে বাড়ির পাশে জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়।’

জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব গণি জানান, সাথী তাদের স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষায় (জেএসসি)গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পড়ালেখার প্রতি মেয়েটির খুব আগ্রহ ছিল। বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয়ে সে খুব ভালো নম্বর পেত এবং ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কারও পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মেয়েটির আত্মহননের খবর পেয়ে আমিসহ আমার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা রাতেই সাথীদের বাড়িতে যাই। সাথীর এমন মৃত্যুতে সকলেই অঝোরে কেঁদেছে। সাথীর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপনের জন্য আজ সোমবার স্কুলের ক্লাস বন্ধ রয়েছে।’

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। বখাটে যুবককে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।এর মধ্যে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর বাবা গোলাম রব্বানী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। অপরদিকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া এবং হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে দ্বিতীয় মামলাটি করেছে।’

ওসি আব্দুর রাজ্জাক ২৬ জনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করলেও পুলিশের ওয়াকিটকি খোয়ানোর কথা অস্বীকার করেছেন।

জেবি/সি