• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

পুলিশের কাছে তুফানের স্বীকারোক্তি

মেয়েকে ধর্ষণের পরেই মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করা হয়

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট, বগুড়া

  ৩০ জুলাই ২০১৭, ১৫:৩১

মা-মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করার আগে মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুফান ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও অন্যদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন। তুফানের বিরুদ্ধে একটি মাদক আইনের মামলা বিচারাধীন রয়েছে।”

এদিকে মা-মেয়েকে বাসায় ডেকে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, তার মা রুমি, ছোট বোন আশা ও তাদের অন্যতম সহযোগী মুন্নাকে ঘটনার ২ দিন পরেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শ্রমিক লীগের শহর কমিটির আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ গ্রেপ্তারকৃত ৪ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১ জন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিতা মা-মেয়ের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে রোববার নির্যাতিতা ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে।

জানা যায়, শহরের চকসুত্রাপুর বেগম বাজার লেন এলাকায় মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা। এর আগে তিনি ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেসময় তার মেয়ে চকসুত্রাপুরে কাউন্সিলর রুমকির বাড়ির কাছে নানার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। এ বছর সে স্থানীয় জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পাশ করেন।

বাসা থেকে শহরে যাওয়া-আসার পথে শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের বন্ধু আলী আজম দিপু মাঝে মধ্যেই তাকে উত্যক্ত করতো। একদিন রিকশা থামিয়ে ওই কিশোরীর মোবাইল নম্বর চায় দিপু। এসময় বুদ্ধি করে সে ভুল নম্বর দেয়। এর বেশ কিছুদিন পর কিশোরীর নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন করে দিপু। পরে তাদের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। এরই একপর্যায়ে দিপু ওই কিশোরীকে তুফানের মাধ্যমে ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবে বলে আশ্বাস দেয়।

এরপর ভর্তির জন্য কিশোরীর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ও কাগজপত্র নেয় দিপু। টাকা নেয়ার পর থেকেই কলেজে ভর্তি করা নিয়ে টালবাহানা শুরু করে দিপু। এরই একপর্যায়ে শহরের চকযাদু রোডে অবস্থিত তুফান সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তূর্য স্যানিটারি স্টোর এর সামনে কিশোরীর সঙ্গে তুফানের কথা হয়। তুফান তাকে সেসময়ও ভালো কলেজে ভর্তি করে দেবার আশ্বাস দেয়।

গেলো ১৭ জুলাই তুফান বন্ধু আতিকের মাধ্যমে ভর্তি বিষয়ে কথা বলতে কিশোরীকে তার বাসায় আসতে বলে। কিন্তু সে বাসায় যেতে রাজি হয়নি। এরপর তুফান তার সহযোগীদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ি পাঠিয়ে কিশোরীকে নিজের বাসায় তুলে নিয়ে যান। এ সময় বাসায় তুফানের স্ত্রী ছিলেন না। সেখানে কিশোরীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনি ধর্ষণ করেন। এতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তুফান তার ক্যাডার আতিকুর রহমানকে ওষুধ কিনে দিতে বলেন। আতিকুর স্থানীয় দোকান থেকে ওষুধ কিনে দিয়ে তাকে বাসায় পৌঁছে দেন। আর ধর্ষণের বিষয়টি ফাঁস না করার জন্য ভয় দেখানো হয়।

ঘটনার সময় তুফানের সহযোগী দিপু, আতিক, রূপম, মুন্না ও গাড়ি চালক জিতু পাহারা দেন। ঘটনার পরদিন ১৮ জুলাই কিশোরী ও তার মা ঢাকায় চলে আসেন।

এদিকে তুফানের বন্ধুদের মাধ্যমে বিষয়টি তার স্ত্রী আশা জানাতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়। সে তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর রুমকিকে বিষয়টি জানায়। পরে কাউন্সিলর রুমকি তুফানের সঙ্গে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গেলো ১৮ জুলাই বিকেলে শহরের চকসুত্রাপুর বেগম বাজার লেনে মেয়েটির ভাড়া বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। একই সঙ্গে কিশোরীর নানার বাড়িতেও হুমকি দেয়। গেলো ২৮ জুলাই ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে কিশোরীর মা তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্সিলরের বাসায় যান। কি কারণে তালা ঝুলানো হয়েছে তা জানতে চান। এসময় কাউন্সিলর রুমকির মা রুমি বেগম ও ছোট বোন তুফানের স্ত্রী আশা কাউন্সিলরের বাসাতেই ছিল।

এরপর রুমকি মোবাইলের মাধ্যমে দিপু, আতিক, মুন্না, রূপমসহ কয়েকজনকে ডাক দেয়। এরা আসার পর রুমকি তার মা ও ছোট বোন মিলে ওই কিশোরী ও তার মাকে পিটাতে শুরু করেন। এরপর নাপিত ডেকে তাদের মাথা ন্যাড়া করে বাসা থেকে বেড় করে দেন। সেইসঙ্গে বগুড়া ত্যাগ না করলে অ্যাসিড মেরে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকিও দেন।

আহত কিশোরীকে গেলো শুক্রবার রাতেই শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে থানা এবং গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ টিম অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে কাউন্সিলর রুমকি তার মা ও বোনকে নিয়ে গা ঢাকা দেয়। শনিবার নির্যাতিত ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

নির্যাতিতা কিশোরী জানান, লোকলজ্জা ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে পারেনি। মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ৪ আসামির মধ্যে আতিক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন এই জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

বগুড়া সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন জানান, ‘শনিবার দুপুরে কিশোরীর মা সদর থানায় তুফান, তার আত্মীয় সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, তার মা রুমি বেগম, তুফানের স্ত্রী আশাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ ও অন্যান্য ধারায় মামলা করেছেন। যতই প্রভাবশালী হোক পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঐতিহাসিক সিরিজে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশের মেয়েরা
ভেঙে গেল ভারত-পাকিস্তানের দুই মেয়ের সম্পর্ক
মেঘনায় ট্রলারডুবি : নিখোঁজ মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার
১২ জনকে উদ্ধার, স্ত্রী-ছেলে-মেয়েসহ এখনো নিখোঁজ কনস্টেবল
X
Fresh