• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘আমি খুব কাছে মা, শনিবার একসঙ্গে ইফতার করবো’

হাসান-উল-আজিজ, লালমনিরহাট

  ২৪ জুন ২০১৭, ১৭:৩২

আমি বগুড়ার খুব কাছে চলে এসেছি মা সেহেরি করো, সকালে (শনিবার) দেখা হচ্ছে। আমারা এক সঙ্গে ইফতার করবো। বাড়ির বড় মুরগীটা রান্না কইরো।

শনিবার ভোরে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাগান কালীবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার আগে মায়ের সঙ্গে এসব কথা বলেন মজনু মিয়া (২২)। এ ঘটনায় মজনু মিয়াসহ ১৭ জনের করুণ মৃত্যু হয়।

নিহত মজনুর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বত্রিশহাজারী গ্রামে। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, মজনুর দেশী মুরগীর মাংস বেশ পছন্দ। তাই ছেলে ছুটি পেয়েছে শুনে তার মা বাড়ি বড় মুরগীটা রান্না করে। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে বাড়ি পৌঁছনোর কথা ছিল মজনুদের। কিন্তু যানজটের কারণে তাদের ট্রাকটি আসতে দেরি করে। তারা সেহরি করেন সিরাজগঞ্জে। বগুড়ায় পৌঁছনোর পর তার সঙ্গে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয়।

ওই ট্রাকের যাত্রী ছিল মজনুর চাচাত বোন বন্যা (৮)। সেও মৃত্যু’র মিছিলে সামিল হয়েছে মজনুর সঙ্গে। আহত হয়েছেন মজনুর চাচা ঝন্টু মিয়া, চাচি জামিনাসহ অনেকেই।

সরেজমিনে মজনুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মজনুর মা মাহফুজা বেগম ছেলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। একটু পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তিনি।

একই গ্রামের কোহিনুর ইসলাম (৪২) ৬ বছর ধরে ঢাকায় কাজ করেন। একমাত্র মেয়ে কুলসুমের বিয়ের সময় করার ঋণ পরিশোধ করতেই ঢাকায় কাজ শুরু করেন এ দিনমজুর। সর্বশেষ রমজানের শুরুতে বাড়ি এসেছিলেন। আবারো চলে যান ঢাকায় ঈদের খরচ যোগাতে। বাসের টিকিট সোনার হরিণ তাই মিলাতে ব্যর্থ হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে ট্রাকে উঠেন কোহিনুর ইসলাম। বাড়ি ফেরার সংবাদ একমাত্র ছেলে রুবেলের মোবাইলে জানান তিনি।

ট্রাকের যাত্রী মজনু ও শিশু বন্যা ও কোহিনুরসহ নিহতদের মধ্যে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বালাপাড়া, উত্তর বত্রিশহাজারী ও লতাবড় গ্রামে ১০ জন ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে ২ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ গার্মেন্টস ও নির্মাণ শ্রমিক। এখন এ গ্রামগুলোতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আসছিল তারা। তবে তারা ঠিকই বাড়িতে ফিরলো কিন্তু লাশ হয়ে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কোলাবাড়িতে ট্রাক উল্টে নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

শনিবার ভোরে সিমেন্টবাহী ট্রাক উল্টে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১৮জন। এদের মধ্যে ১১ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মকবুল হোসেন জানান, তারা বাসের টিকিটি না পেয়ে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে করে বাড়ি যাচ্ছিলেন।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে আরেক ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১
প্রাইভেটকারে আগুন লেগে কৃষক লীগ নেতাসহ নিহত ২
দুবাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল আওয়ামী লীগ নেতার
X
Fresh