• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাড়ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, দুর্ঘটনার শঙ্কা

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

  ২১ জুন ২০১৭, ১৪:৫১

ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন পুরাতন বাসের সংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত যাত্রীবহন করে বাড়তি আয়ের জন্য পুরাতন এবং অকেজো পড়ে থাকা বাসগুলোকে মেরামত ও রং দিয়ে রাস্তায় নামানো হচ্ছে।

এসব বাস ঘন ঘন রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও দেখছে না। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিআরটিএ’র তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক।

এ পথে নবীনগরের পর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার কোচ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশী যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান ও গাবতলী থেকে আরিচা-পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত এবং জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ৪শ বাস চলাচল করে।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আরিচা পুরাতন ট্রাক টার্মিনাল ও বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে ভাটবাউর, জেলখানার পাশে উচুটিয়াসহ বিভিন্ন গ্যারেজে চলছে পুরাতন গাড়ি মেরামতের কাজ।

গ্যারেজ মালিক আব্দুল আজিজ জানান, ঈদের আগে প্রতিবছরই পুরাতন গাড়ির মেরামত ও রংকরণ কাজের ধুম পড়ে যায়। এসব কাজে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পরিবহন শ্রমিক হিরু শেখ বলেন, এক শ্রেণির অতি মুনাফা লোভী গাড়ির মালিকরা ঈদকে টার্গেট করে রাখে। তারাই সুযোগ বুঝে পুরাতন লক্কড়-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন গাড়ি রং করে রাস্তায় নামায়। পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে সৃষ্টি করে যানজটের। আইনের তোয়াক্কা না করে চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে তারা চুটিয়ে ব্যবসা করছে। সেবা তো দূরের কথা যাত্রীদের কোনো নিরাপত্তা নেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাড়িতে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সঙ্গে ভোগান্তিতো আছেই।

ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করলেও নেয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা।

গাড়ি চালক আব্দুল মালেক বলেন, গাড়ির মালিকরা ত্রুটিপূর্ণ অকেজো গাড়িগুলো কোনো মতে মেরামত, রং করে রাস্তায় ছেড়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই।

যাত্রীসেবা পরিবহনের বাস মালিক গোলাম মোরশেদ খান রুবেল বলেন, গাড়ির জ্বালানী এবং যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসায় বেশী লাভ হচ্ছে না। দুই ঈদ এবং পূজার সময় যাত্রীদের চাপ বেড়ে গাড়ির সংকট দেখা দেয়। এসময় একটু বাড়তি আয় করতে পুরাতন গাড়িগুলো ঠিক করে রাস্তায় নামানো হয়। এতে যাত্রী সেবাও হলো আমাদের ইনকামও হলো।

রুবেল অভিযোগ করেন, গাড়ির ফিটনেস থাকলেও রোডে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। তার টাকা না দিলে পুলিশ নানা ধরনের হয়রানি করতে থাকে। ফলে গাড়িগুলো কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে চালানো ছাড়া কোন উপায় নেই।

শুভযাত্রা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, শুভযাত্রা পরিবহনের বাস আছে মোট ৮০টি। এদের মধ্যে ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত ৫০টি বাস চলে এবং মানিকগঞ্জের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে চলে ৩০টি। তাদের গাড়ীগুলো সরকারের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করেই চলছে।

ঈদের আগে গাড়ির সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইঞ্জিনসহ গাড়ির যন্ত্র ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সচল রাখার জন্যই মাঝে-মধ্যে গাড়িগুলোকে গ্যারেজে পাঠাতে হয়। ঈদের তিন চার দিন আগে এবং পরে অন্য রোডে চলাচলকারী তিতাস, পলাশ ও নিরাপদ পরিবহণসহ গার্মেন্টস’র রিজার্ভ যাত্রী পরিবহনের লক্কড় ঝক্কর মার্কা বাস এ রোডে যোগ হয়। এ সকল বাসেই বেশী দুর্ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে আরিচা-পাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচলরত বিআরটিসি ও শুভযাত্রা পরিবহনের বাসের কোনটির গ্লাস ভাঙা, কোনটির লুকিত গ্লাস নেই। আবার কোনোটির সামনে এবং পেছনের বাম্পার খোলা, কোনটির জানলার কাঁচ অর্ধভাঙা।

এছাড়া যাত্রীসেবা, নবীন বরণ, যোগাযোগ, পরিবহন গাবতলি থেকে সাটুরিয়া এবং ঘিওর, দৌলতপুর ও হরিরামপুর রুটে চলাচলরত ভিলেজ লাইন পরিবহনের একই অবস্থা। পাটুরিয়া থেকে গাবতলি পর্যন্ত পদ্মা লাইনের বাস সিটিং সার্ভিসের কথা বলে পথিমধ্যে বিভিন্ন কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে যাত্রী ওঠায়। সব মিলে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

মানিকগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোবারক হোসেন জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতিদিন ১৫ হাজার গাড়ি চলাচলের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এ রুটে বর্তমানে ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। এরই মধ্যে বেশীরভাগ যানবাহন ঢাকার রেজিস্ট্রেশন নেয়া এবং আন্তঃজেলার মধ্যে চলাচল করে থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩০ দিন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১শ ৬৭টি মামলা এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার ৭শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে সড়কে চলাচল করতে না পারে সে লক্ষ্যে ডিএসবিসহ অন্যান্য পুলিশদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলা পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়েছে। গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ফিটনেসবিহীন সব গাড়ী আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া মহাসড়কে চলমান গাড়ি চেক করে তা জব্দ করতে গেলে তীব্র যানজট তৈরি হবে এবং যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বাড়বে। সুতরাং এ বিষয়ে গাড়ির মালিক, শ্রমিকসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh