• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অভাব আটকে দিচ্ছে জিপিএ-৫ পাওয়া আশার লেখাপড়া

সুজয় কুমার বকসী, নড়াইল

  ১০ মে ২০১৭, ১৪:২৬

বিখ্যাত কবি নবীন চন্দ্র সেন পলাশীর যুদ্ধ কাব্যগ্রন্থে লিখেছিলেন, ধণ্য আশা কুহকিনী! তোমার মায়ায় মুগ্ধ মানবের মন, মুগ্ধ ত্রিভুবন! আসলেই কি আশা কুহকিনী? নাকি জীর্ণ। তবে নড়াইলে জীর্ণ কুঠিরে আশার আলো জাগালো আশা খাতুন।

যখন আশার তিন বছর তখনই তার মা স্বামী পরিত্যক্ত হয়। সে আজো জানেন না তার বাবা জীবিত কিনা মৃত। বাবার ভিটে না থাকায় নড়াইলের চাঁচড়া গ্রামের মামার আশ্রয়ে থাকতে হয় তাকে। তার মামাও তেমন ধনী নয়। মামার সংসার আর তাদের সংসার নিয়ে কোনো মতে দিনযাপন করেন তারা। পাটকাঠির টিনের চালা ঘরে বর্ষায় স্রোত আর গ্রীষ্মের রৌদ্র প্রতাপ নিত্যদিন সঙ্গী আশার পরিবারের। বাড়িতে নেই বিদ্যুতের ছোঁয়া।

এসব বাধাকে ডিঙ্গিয়ে নড়াইলের তুলারামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা স্কুলকে রাঙিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখা থেকে জিপিএ- ৫ পেয়েছে আশা। এ বছর তাদের বিদ্যালয় থেকে একমাত্র আশাই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তবে আশার প্রদীপ যেন নিভতে শুরু করেছে। অভাবের সংসারে আর কতটুকুবা পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারবে তার পরিবার। তাই রীতিমতো পড়ালেখার হাল ছাড়তে হচ্ছে আশাকে। আশার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন অতলে রয়ে যাচ্ছে।

আশা জানায়, প্রতিদিন সে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পড়ালেখা করতো। পড়ার ফাঁকে নবম শ্রেণির চার শিক্ষার্থীকে টিউশনি করিয়ে মাসিক সম্মানী পেত মাত্র ৮০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ যোগানোর চেষ্টা করতো। মূল বইয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয় থেকে সহায়ক বই, খাতা-কলম ও স্কুলড্রেস পেয়েছে সে। পদার্থ ও রসায়ন ছাড়া কখনো প্রাইভেট পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। আশা ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায়। তবে গোল্ডেন জিপিএ-৫ না পাওয়ায় অনেক দুঃখ তার। ইংরেজি বিষয়ে এ গ্রেড হওয়ায় ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের মাধ্যমে গোল্ডেন জিপিএ-৫ লাভের আশায় বুক বেঁধেছে আশা।

আশার মা জোবেদা বেগম জানান, তার স্বামীর বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। আশার বয়স যখন তিন বছর, তখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মানসিক যন্ত্রণা ও নির্যাতনের কারণে কুমিল্লা থেকে বাবার বাড়ি নড়াইলের চাঁচড়া গ্রামে চলে আসেন তিনি। বাবার বাড়িতে ভিটেমাটি ছাড়া তেমন কিছু না থাকায় নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধ।

কঠোর পরিশ্রম করেও সন্তানদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে অনেক বেগ পেতে হয় আশার মা জোবেদা বেগমকে। তবুও সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার নিরন্তর চেষ্টা তার। প্রায় দুই বছর আগে বড় মেয়ে সামিয়া জামানকে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় বিয়ে দিলেও পড়ালেখা থেমে থাকেনি তার। সামিয়া এ বছর নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স শেষবর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন।

এদিকে, আশার পাশাপাশি ছোট ভাই সৌরভ হোসেন পড়ছে স্থানীয় দারুল উলুম আলিম মাদরাসার সপ্তম শ্রেণিতে। পড়ালেখার পাশাপাশি সৌরভও বিভিন্ন কাজ করে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁচড়া গ্রামের লামিয়া খাতুন জানান, শত বাঁধা পেরিয়ে আশা আপু আমাদের মাঝে আশার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। সে আমাদের এলাকার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

প্রতিবেশীরা জানান, আশা খুব কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছে। মামাবাড়ির ভিটায় জরাজীর্ণ টিনের খুপড়ি ঘর ছাড়া কিছু নেই তাদের। রান্নার কাজটিও করতে হয় উঠোনের একপ্রান্তে খোলা জায়গায়।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শিউলি খাতুন বলেন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে আশা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। আশা জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তিনি জানান, এ বছর তাদের বিদ্যালয় থেকে একমাত্র আশা খাতুনই জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এমসি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh