• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জব্বারের বলি খেলা মঙ্গলবার, বাধা হতে পারে বৃষ্টি

জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম

  ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৫৯

বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি শক্তিমত্তার লড়াইয়ে নিজেদের যোগ্য করে তুলতে ১৯০৯ সালে লালদিঘী মাঠে বলি খেলার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল জাব্বার এ বলি খেলার আয়োজন করায় তার নামেই এই বলিখেলার নামকরণ হয়ে যায়। জব্বারের বলি খেলার এবার ১০৮তম আসর। প্রতিবছরই বাংলা বছরের ১২ বৈশাখে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলা।

বলি খেলা হবে মঙ্গলবার। লালদিঘীর মাঠে এরই মধ্যে বলিদের জন্য তৈরী করা হয়েছে বিশাল রিং। গেলো বছর কক্সবাজার, টেকনাফ, রামু চকরিয়া এবং পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ১৫০ জন খেলোয়াড় অংশ নেন। এতে ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজার জেলার রামুর দিদার বলিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন টেকনাফের শামসু বলি। গেলবার দীর্ঘক্ষণ লড়াই শেষে শামসু বলির কৌশলের লড়াইয়ে হেরে যান দিদার বলি। এবারো দুই বলির লড়াই দেখার অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী।

জব্বারের বলি খেলাকে ঘিরেই বসে গ্রামীণ লোকজ মেলা। এ উপলক্ষ্যে দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গ্রামীণ লোকজ মেলার আয়োজন। নগরীর লালদিঘীর মাঠে জব্বারের বলি খেলা হলেও এ মাঠের চারপাশ জুড়ে বসেছে বৈশাখী মেলা। যার পরিসর ছড়িয়ে পড়েছে আন্দরকিল্লা, কেসিদে রোড, কোতয়ালী মোড় পর্যন্ত। ৩ দিনব্যাপী মেলা ২৫ এপ্রিল সোমবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২৩ এপ্রিল শনিবার থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছে মেলায়।

প্রতিবছর মেলার সময়সীমা শেষ হলেও মেলার পণ্য বিকিকিনি চলে বাড়তি দুই একদিন। জব্বারের বলি খেলাকে ঘিরে এই মেলা জড়িয়ে গেছে চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ের সাথে। পুরো বছর অপেক্ষা করেন এখানকার গৃহিনীরা। ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার একটা বড় সুযোগ এ মেলা। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মেলায় পণ্যের পসরা নিয়ে আসেন ব্যবাসায়ীরা। মাটির তৈরী নানা সামগ্রী, বাঁশ ও বেতের তৈরী মোড়া, হাতপাখা, শীতল পাটি, চেয়ার থেকে শুরু করে নানা আসবাবপত্র আনা হয়েছে মেলায়।

তাছাড়া কাঠের নানা আসবাবপত্র শোভা পেয়েছে মেলায়। ফলজ, ভেষজ ও ঔষধি গাছের চারার পাশাপাশি নানা বাহারি ফুলের চারাও বিক্রি হচ্ছে মেলায়। চুড়ি, শোপিস ছাড়াও শিশুদের নানা খেলনার পাশাপাশি ফুলের ঝাড়ুর বিশাল সমাহার থাকে চোখে পড়ার মতো। অতিথি আপ্যায়নে বাঙালি অন্যরকম পারদর্শী তাই মেলাজুড়ে মুড়ি মুড়কির দোকানও রয়েছে অসংখ্য। আনন্দে মেতে ওঠার বাঙালি সংস্কৃতির অনন্য উপকরণ নাগরদোলাসহ নানা ধরনের রাইড শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে মেলার।

বাকলিয়া থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থী শিক্ষিকা সলিকা বেগম আরটিভি অনলাইনকে জানান, এ মেলায় ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায়।চট্টগ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় ছোট বেলা থেকে এ মেলায় আসি। এই মেলায় আসার স্মৃতি অনেক মধুর। তাই প্রতিবছর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পাশাপাশি মেলায় ঘোরাঘুরি করতে বেশ মজা লাগে।

কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল আলম তার শিশুকন্যা তাসমিয়াকে এনেছেন মেলা দেখাতে। তিনি জানান, সোমবার থেকে মেলায় ভিড় বাড়বে। মেয়ের বায়না মেটাতেই মেলায় নিয়ে এসেছি। কিছু ফুলের ঝাড়ু তার হাতে দেখিয়ে বললেন প্রতিবছর এ মেলা থেকে ফুলের ঝাড়ু কিনে বছর পার করে দেন। এই মেলার ঝাড়ু বেশ মজবুত ও টেকসই বলে জানালেন তিনি।

চট্টগ্রাম কলেজের এক শিক্ষার্থী কাবেরী দাশ জানান, এই মেলার খবর শুনি প্রতি বছর। এবার প্রথম বান্ধবীদের সঙ্গে আসলাম। মেলা ঘুরে নানা সামগ্রীর সমাহার দেখে বেশ আনন্দিত। ড্রয়িং রুমের কোণে রাখার জন্য একটি মাটির তৈরী বড় টপ কিনে নিলাম। মেলা ছাড়া এগুলো অনেক বেশি দামে কিনতে হয়। এখানে অনেক কম টাকায় কিনতে পেরেছি।

সিলেট থেকে বেতের তৈরী সামগ্রী নিয়ে এসেছেন ব্যবসায় রইস উদ্দীন। তিনি আরটিভি অনলাইনকে জানান, বিগত ১৫ বছর ধরে এই মেলায় আসছি। মেলার একটি ঐতিহ্য আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বছরজুড়ে এ মেলার জন্য বেতের তৈরী মোড়া, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র তৈরী করি। প্রতিবছর বিকিকিনি করে বেশ ভালই লাভ হয়।

বিচিত্র রং আর ডিজাইনের চুরি আর নানা পদের খেলনার পসরা নিয়ে বসেছেন গুল নাহার বেগম। মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এ মেলায় ব্যবসা করে আসছি। মেলায় লাভও ভাল হয়। বছরের অন্য সময় শাড়ী ও থান কাপড় ফেরি করি। তবে এ বছর আগাম বর্ষার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হবে।

জব্বারের বলি খেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী আরটিভি অনলাইনকে জানান, বলি খেলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে হালকা ও মাঝারী বৃষ্টির কারণে কিছুটা সাজসজ্জায় বিঘ্ন হচ্ছে। তারপরেও বলি খেলার মূল আয়োজন রিং পুরোপুরি তৈরী হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১২০ জন বলি প্রতিযোগিতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। সোমবারের মধ্যে তা দেড়শ' ছাড়িয়ে যাবে। বৃষ্টি হলেও বলি খেলা চলবে বলে জানান তিনি।

আয়োজক কমিটির সচিব শওকত আনোয়ার বাদল জানান, খেলা ও মেলার নিরাপত্তার জন্য বিপুল পরিমাণ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাক ও ইউনিফরম পরা অসংখ্য পুলিশের পাশাপশি র‌্যাব সদস্য মোতায়েন আছে বলে জানান তিনি।


এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh