• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মান্দি দম্পতির মাথা ন্যাড়াকারীদের খুঁজছে পুলিশ

বিপ্লব বসাক, ময়মনসিংহ

  ১৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৩৬

মান্দি দম্পতির মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। সেই মামলার আসামিদের খুঁজছে পুলিশ।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় প্রতিবেশী এক মুসলিম অটোরিকশাচালকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনে মান্দি দম্পতির মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। রোববার বিকেলে পুলিশ উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেট গ্রাম থেকে ওই দম্পতিকে থানায় নিয়ে আসে। পরে তারা মামলা করেন।

ফুলবাড়ীয়া থানার ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় মাতাব্বর রশিদ চন্দ্র কোচকে প্রধান করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে লক্ষী রানী বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তারের ভয়ে মান্দি সম্প্রদায়ের মাতব্বরা পলাতক রয়েছে।

ওসি রাজীব বলেন, মামলা হয়েছে, এখন ব্যবস্থা নেব। এরই মধ্যে দুঃখীরাম কোচ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিলপাড়া গ্রামে মান্দি সম্প্রদায়ের কয়েস চন্দ্র কোচ এবং তার স্ত্রী লক্ষ্মী রাণী কোচ তাদের ৩ সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

অসচ্ছল এ পরিবারটির সঙ্গে বছর খানেক আগে পাশের গ্রামের ইবির আলীর পরিবারের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সে সুবাদে দুই পরিবারের সদস্যরাই একে অপরের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো।
কিন্তু হঠাৎ করেই এনিয়ে মান্দি সম্প্রদায়ের মাতব্বররা গেলো বুধবার রাতে সালিস ডাকে। সেখানে লক্ষ্মী রাণী কোচের বিরুদ্ধে ইবির আলীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাকে ব্যাপক মারধর করে এবং মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় লক্ষ্মী রাণী ও তার স্বামীকে। একই সঙ্গে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে গোটা এলাকা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসীও।

নির্যাতিত দম্পতি কয়েস কোচ ও লক্ষী রানী কোচ আরটিভি অনলাইনকে জানান, পাশের গ্রামের মুসলিম পরিবার সাথে ইবির আলীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকার কারণে গ্রাম শালিসে দেড়শ মানুষের উপস্থিতিতে মাথা ন্যাড়া করে মারপিট করে জুতার মালা পরিয়ে রাখা হয়। এক পর্যায়ে গোবর খাওয়ানো জন্য নিয়ে আসে। ৫ গ্রামের মানুষদের দাওয়াত করে খাওয়ানোর জন্য ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে কোচ দম্পতিকে বাড়ি ছাড়া করবে মাতব্বররা এমন হুমকি দেয়।

এদিকে নির্যাতিত লক্ষী রানী কোচ বলেন, মিথ্যা ঘটনায় আমাদের মতো নির্যাতন যাতে সমাজে আর কেউ না হয়। সমাজের কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। আমাকে ও আমার স্বামীকে যারা প্রকাশ্যে নির্যাতনের হুকুম দিয়েছে এবং নির্যাতন করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এদিকে অসুস্থ নির্যাতিত দম্পতিকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী সুষমা আর্থিক সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই খারাপ হয়েছে। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেকান্দর আলী বলেন, ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের না জানিয়ে এভাবে সালিশ-দরবার করে মাতাব্বররা অন্যায় কাজ করেছেন। তাদের বিচার হওয়া উচিত।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিনা তরফদার জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এটি ন্যক্কারজনক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এখন ভুক্তভুগি পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

আরকে/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh