• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

এক সময়ের কোটিপতি পারুলের ঠাঁই এখন হোস্টেলে

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪৮

সত্তরোর্ধ্ব সাফাক আরা সোবহান ওরফে পারুল। স্বামী ছিলেন নামকরা চিকিৎসক। রাজধানীর বনানীতে আছে বিরাট বাড়ি। আছে উত্তরাতেও। যার আনুমানিক মূল্য দেড়শ' কোটি টাকা। বড় ছেলে মাহবুব চিকিৎসক। দুই মেয়ের একজন বিসিএস ক্যাডার। পরিবারে আছে বলতে ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি-নাতনী। বৃদ্ধ বয়সে তাদের সঙ্গেই থাকার কথা ছিল তার। নাতি নাতনীদের সঙ্গে জীবনের শেষ সময়টা হয়তো কাটাতে পারতেন। কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। জীবন সায়াহ্নে এসে সাফাক আরাকে এখন থাকতে হচ্ছে ইন্দিরা রোডের একটি হোস্টেলে।

বছর দশেক আগেও বনানীর বাসায় তার ছিল সুখের সংসার। স্বামী শেখ আব্দুস সোবহান আর সন্তানদের নিয়ে ভালই কাটছিল। তবে স্বামীর মৃত্যুুর পর বদলে যায় সব। তুমুল ঝড় বৃষ্টির এক রাতে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তার ছেলে। কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় অসহায়ের মত ঘুরছিলেন। সহায়তার হাত বাড়ায় কেউ একজন। পৌঁছে দেয় বনশ্রীতে এক স্বজনের বাসায়। সেখানেই কিছুদিন আশ্রয় হয় তার। বারবার সংসারে ফেরত আসতে চাইলেও ছেলে অনুমতি দেয়নি।

ডা: শেখ আব্দুস সোবহানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেসময় ৩ সন্তানকে নিয়ে অকুল পাথারে ভাসছিলেন সোবহান। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এরপর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সাফাক আরা সোবহানের সঙ্গে। অবিবাহিত সাফাক আরা তখন ঢাকায় চাকরি করছিলেন। প্রথম পক্ষের সন্তানদের নিজের সন্তানের মতই আপন করে নিয়েছিলেন সাফাক আরা। মায়ের মমতায় পরম যত্নে করেছেন লালন পালন। কিন্তু বিধি বাম। ১৮ বছর সংসার জীবন শেষে স্বামীর মৃত্যুর পর এমনটা হবে কে জানতো? সাফাক আরাও বোঝেননি। মায়ের মতই আগলে রেখেছিলেন এতকিছু না ভেবে।

সাফাক আরার ভাষায়, 'খুব ইচ্ছে নাতি নাতনীদের সঙ্গে সময় কাটাবো। কিন্তু তা আর হয়না। এই বয়সে কি করবো আর। ওখানে (হোস্টেলে) কী আর থাকতে ভাল লাগে?' সাফাক আরার করুণ চাহনী বলে দেয় সব। 'আমি বারবার বলেছি, যাতে আমাকে ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু ওরা আমাকে নেয়নি। আমার অপরাধ ছিল আমি ওদের সৎমা। কিন্তু আমি তাদের কোনদিনই খারাপ আচরণ করিনি। নিজের সন্তানের মত আচরণ করেছি। নিজের সন্তানও নিইনি। এটাই কী অপরাধ?'

সাফাক আরা ফিরে যেতে চেয়েছিলেন সংসারে। কিন্তু লাভ হয়নি কোনো। বরং হুমকি এসেছে বারবার। দূরেই থাকতে বলা হয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি। এ নিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পরিবারের সঙ্গে কয়েকবার কথাও হয়। কিন্তু সন্তানরা ফিরিয়ে নিতে নারাজ। নিজের প্রাপ্য সম্পদও তিনি পাননি ফেরত। তবে আসকের মধ্যস্ততায় ছেলে প্রথমে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা হারে দিতেন। এখন আট হাজার টাকা করে দেন। সেই টাকায় কোনোমতে চলছেন তিনি। এ অবস্থায় সবকিছু ফিরে পেতে অসহায় সাফাক আরা চান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসকের আইনজীবী এ্যাড সুমিতা দাস জানান, সাফাক আরা সোবাহানের সন্তানরা তার সঙ্গে থাকতে রাজি নন। তার স্বামীর প্রায় দেড়শ কোটি টাকার সম্পদ। নিয়মানুযায়ী সম্পত্তির বাটোয়ারা তিনি সম্পদের ভাগ পাবেন। কিন্তু মামলা হলে সেটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আমরা আপাতত তার মাসিক চলার খরচের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি চাইলে মামলা করে তা চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এ বয়সে সেটা তার জন্য একদিকে যেমন কষ্টসাধ্য হবে, অন্যদিকে মামলার আর্থিক খরচ চালানো অসম্ভব।

এ বিষয়ে সাফাক আরা সোবহানের সন্তান ও বারডেমের চিকিৎসক ডা: মাহবুব সোবহান জানান, তিনি নিজেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চেয়েছেন। আমরা তাকে যেতে বলিনি। বৃদ্ধাশ্রমের যা খরচ তা আমিই বহন করি। আসকের মাধ্যমে তা নিয়মিত পরিশোধ করা হয়। সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh