• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বর্ষবরণে চট্টগ্রামে উৎসব আমেজ

জয়নুল আবেদিন, চট্টগ্রাম

  ১২ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:১৭

২ দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশজুড়ে দিবসটি আয়োজনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্কৃতি ব্যক্তিবর্গ। চট্টগ্রামবাসী ও পিছিয়ে নেই তার থেকে। জঙ্গি নির্মূল চেতনায় শাণিত বৈশাখকে প্রতিপাদ্য করে ১৪২৩কে বিদায় দিয়ে রবি ঠাকুরের মুছে যাক গ্লানি, ‘ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ কবিতার লাইনকে প্রতিপাদ্য করে ১৪২৪ বরন করবে তারা। এরি বাংলা নববর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠান বর্ণিল সাজে আর বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামবাসী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত চারুকলা বিভাগ, ডিসি হিল ও সিআরবি শিরিষ তলাসহ নগরীর বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বর্ণাঢ্য সাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাঙালির প্রাণের এই উৎসব সার্বজনীন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা উদ্ধারের ঘটনার পরপরই বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাঙালির এ উৎসবে অপ্রত্যাশিত কোনো দুর্ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের দিন সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। অনিন্দ্য সুন্দর সাজ, বিচিত্র ও নানা বর্ণের মুখোশ হাতে নিয়ে বাদ্যের তালে তালে পুরো নগরীকে মাতিয়ে তোলে। চারুকলার এমন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মনে দাগ কাটে বাঙালির হৃদয়ে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আর বর্ষ বরণের পাশাপাশি এবারেই প্রথমবারের মতো বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে চারুকলা ইন্সটিটিউট। বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে দিনভর থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নানা অনুষ্ঠান। আরটিভি অনলাইনকে এসব কথা জানান চারুকলা ইন্সটিটিউট আয়োজিত বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কোঅর্ডিনেটর সজিব সেন।

এবারে বর্ষবিদায় উপলক্ষে ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে ১৩ এপ্রিল বিকেলে বের করা হবে শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় শোভা পাবে সাপে নেউলে যুদ্ধের চিত্র। থাকবে গ্রাম বাংলার নানা ঐতিহ্যবাহী চিত্র। নানা বর্ণিল ও নানা বৈচিত্র্যের মুখোশের চিত্র থাকবে শোভাযাত্রায়।

প্রতিবছরের মতো সকালে বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রাও বের হবে চারুকলা থেকে। সারাদিন নানা অনুষ্ঠান চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। চারুকলার অনুষ্ঠান সুশৃঙ্খল করতে চারুকলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতাও চেয়েছেন বলে জানান কোঅর্ডিনেটর সজিব সেন।

অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে এসব কথা জানান, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষ তলায় বিগত ৯ বছর ধরে পালন করা হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এত বছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করলেও এ বছর আয়োজন করতে যাচ্ছে বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান। ঘটা করেই পালন করা হবে এসব অনুষ্ঠান। শিরিষ তলার বর্ষ বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণীয় থাকবে শাহাবুদ্দিনের বলি খেলা।

তিনি আরো জানান, নিরাপত্তার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে সিসি ক্যামেরাসহ বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য থাকবেন। থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার আরটিভি অনলাইনকে জানান, ৩৯ বছর ধরে চট্টগ্রামের ডিসি হিলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। বাঙালির এই প্রাণের উৎসব আনন্দ উৎসবে পরিণত করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

তবে বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে, সরকারের এমন নির্দেশে হতাশা প্রকাশ করে আরটিভি অনলাইনকে তিনি জানান, এ নিয়মের ফলে অনেক কাটসাট করে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। সার্বজনীন এই উৎসবে দেশজ কাপড় চোপড় পরে অনুষ্ঠানে আসে সকলেই। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে বাঙালির আনন্দটায় কিছুটা চিড় ধরে।

তিনি আরো বলেন, হোটেল-মোটেলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বৈশাখের বিশালতাকে ধারণ করতে পারে না। বদ্ধঘরে বৈশাখ হয় না। উন্মুক্ত জায়গায় খোলা আকাশের নিচে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বৈশাখের আয়োজন সমৃদ্ধ হয়।

মূলত সম্প্রতি জঙ্গিবাদের ঘটনায় সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সীমিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দেয়া খুবই কঠিন। তারপর সরকারি নির্দেশে মনের ব্যথা নিয়ে রাত ৮টার পরিবর্তে বিকাল ৫টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তবে আমরা চাই জঙ্গি ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সকলেরই সহযোগিতা দরকার।

এদিকে নগরের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের ১২শ’ সদস্য নগরজুড়ে মোতায়েন করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপির কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল বাহার। এছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা পুরো নগরজুড়ে টহলরত থাকবে।

অনুষ্ঠানস্থলে কোনো ধরনের খাবার ও পানির বোতল বহন করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। অনুষ্ঠানস্থলে পানির ব্যবস্থা করবে পুলিশ।

এমসি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh