• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় রিজার্ভ চুরি

মিথুন চৌধুরী

  ০২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:২৪

চলতি অর্থবছরটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য বছর ছিল। রিজার্ভ চুরির ঘটনা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসেবে গেলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬.৫৫ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ১৭৮ দেশের অর্থনীতির স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১৩১ তম অর্জন করে এ বছর। ঋণ খেলাপি ও পোশাকখাতের অস্থিরতাসহ নানা ঘটনা ঘটে অর্থনীতিতে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর। কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চূড়ান্ত চুক্তি সই। সবকিছু মিলিয়ে ঘটনাবহুলই ছিলো বিদায়ী বছর। এছাড়া বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপ নেয়ার আভাসও নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে আরটিভি অনলাইনে বলেন, প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক। তবে এটা একটা সূচক মাত্র। এটা দেখে মানুষের জীবনযাত্রার মান সঠিকভাবে বোঝা যায় না। যেগুলো জিডিপি বাড়ায়, যেমন—বেসরকারি বিনিয়োগ ২১ বা ২২ শতাংশ মাত্র, রপ্তানি খাতটা ভালোভাবে চলেছে, যদিও রেমিট্যান্স আবার কমে গেছে, আমদানি কিছুটা কমে গেছে, কৃষি মোটামুটি ভালো। সুতরাং সব দিক মিলিয়ে জিডিপি ৭ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। জিডিপি বাড়ার আরেকটি কারণ সার্ভিস সেক্টরে বেতন-ভাতা বেড়েছে। এটা যোগ হবে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় জিডিপি ৬.৫ থেকে ৬.৮ শতাংশ থাকতে পারে।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে এতোদিন ৬ শতাংশ জিডিপিতে আমরা আটকে ছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু এর সুফল আসলে কারা পাচ্ছে? কৃষিতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ আগে থেকেই। উৎপাদনমুখী শিল্প উন্নত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। সেটা করা দরকার।

জাতিসংঘের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে বেরিয়ে আশার আভাস পাওয়া গেছে। এ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে বলে জানান, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ১. মাথাপিছু আয় বাড়ানো, ২. অর্থনীতির ভঙ্গুরতা দূর করা এবং ৩. মানবসম্পদের উন্নয়ন।

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ হিসেবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৬ ডলার। অর্থনৈতিক এই সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে গ্রামীণ অর্থনীতি এবং গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত অবস্থায় রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি এখন চাঙ্গা। রপ্তানির পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে। বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ যাচ্ছে গ্রামে। সেই টাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। তথ্য ও প্রযুক্তি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ২০২১ সালে ২ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় অর্জন করতে হলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লাগবে। সেটি যদি অর্জিত হয় তাহলে তা সম্ভব। মাথাপিছু এই আয় অর্জন করতে হলে প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন, কিছু ব্যবসায়ী টাকা বানাচ্ছে, সুখে আছে। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সুবিধা নিচ্ছে কেউ কেউ। কিন্তু সেটার ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি আগায় না। অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে খুশি রাখা ভালো কিছু হয় না। তাই সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযাগ দিতে হবে। জিনিসের দাম কমালে চাহিদা বাড়বে এবং লাভও বেশি হবে। ব্যাংকে ঋণ খেলাপি বাড়ছে। ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর বাড়াতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে কষ্টের টাকা জ্বলেই চলে যাবে। মাঝখানে খেলাপিরা লাভবান হবে। ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকার ও গভর্নকে ব্যাংকিং খাতের বাইরে শেয়ারবাজারের দিকেও নজর রাখতে হবে। ব্যাংকিং খাতের বাইরে শেয়ারবাজারে বেশ লেনদেন হচ্ছে। এ খাতে সকল প্রতিষ্ঠানের আনাগোনা রয়েছে তাই এর প্রতি সকলের যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

এমসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিদায় ২০১৬ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh