• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ষোলোকলা পূর্ণ করেছে এনবিআর

মিথুন চৌধুরী

  ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৫৬

গেলো কয়েকবছরে রাজস্বখাতে আশার আলো মিটিমিটি করে জ্বললেও ২০১৬ সালে তা আলোকিত হয়েছে। টার্গেট এবং লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করায় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করলো রাজস্বখাত।

চলতি বছর দেশে টিআইএনধারীর (কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী) সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার। যা গতবছর ছিলো ১৮ লাখ। এখন তা ৩০ লাখের কোঠায়।

চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার নতুন রেকর্ড গড়ে এনবিআর। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড ১৬.৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। যা বিগত ৫ বছরের চেয়ে সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি আয়কর, আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এই তিন বিভাগ থেকে মোট ৬৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে মূসক বা ভ্যাট বিভাগ থেকে প্রথম পাঁচ মাসে আদায় ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একই সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এই বিভাগে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫.৭৯ শতাংশ।

আদায় বেড়েছে আয়কর বিভাগে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরে আয়কর আদায় হয়েছিল ১৬ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৪.৯৬ শতাংশ।

পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সাতদিনের আয়কর মেলায় দেশব্যাপী সোয়া ৯ লাখের বেশি মানুষ সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৪ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দেয়ার বিপরীতে মেলায় আয়কর দিয়েছেন ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। গত বছর মেলায় রিটার্ন জমা পড়েছিল ১ লাখ ৬২ হাজার। যা গতবারের তুলনায় আড়াইগুণ বেশি, প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ এবার মেলায় ই-টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) নেয়ার মাধ্যমে আয়করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৩টি জেলা, ৩১টি উপজেলাসহ মোট ৪৪টি স্পটে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি বছরে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে শুল্ক, মূসক গোয়েন্দা ও সিআইসি সেলকে শক্তিশালী করেছে এনবিআর। এদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠানটি এ বছর অর্থ পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছেন। পাশাপাশি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় সোনা এবং মিথ্যা ঘোষণায় শত শত কোটি টাকার পণ্য জব্দ ও মামলা করে। ভ্যাট প্রদানে উৎসাহ বাড়ানোর জন্য প্রচারণাও ছিল লক্ষ্য করার মত।

চলতি বছরে এনবিআরের কর আদায়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে- বৃহৎ ও মাঝারি করদাতা চিহ্নিত করে মনিটর করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণা ও অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রমে নজরদারি, রাজস্ব ফাঁকির তদারকি, করদাতাদের সেবা বৃদ্ধি ও করদাতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা তৎপরতা ভিত্তিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, অনিবন্ধিত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপে নিবন্ধিত করা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কার্যকরে উচ্চ আদালতে অনিষ্পন্ন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, বকেয়া আদায় কার্যক্রম নিয়মিত মনিটর, প্রকৃত করদাতা শনাক্ত ও করসেবা নিশ্চিত করতে ইটিআইএন ব্যবস্থা চালু, ই-পেমেন্ট, ভ্যাট আইন যুগোপযোগী করা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, করজাল বিস্তারে প্রত্যেক কর অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের করদাতা সংগ্রহে সর্বোচ্চ মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রতিটি কর অঞ্চলে করজাল বিস্তারে কর্মকৌশল ঠিক করে তা বোর্ডে পাঠাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে নতুন করদাতা যুক্ত করতে শহরকেন্দ্রিকতা ছেড়ে উপজেলা বা তৃণমূল পর্যায়ে যাওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

করজাল বিস্তারে চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলক ই-টিআইএনের আওতায় আনা হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক ও তদারকির পর্যায়ে চাকরিজীবীদের ই-টিআইএন নিতে হবে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলে রিটার্ন জমা দিতে হবে না। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি, তাদের অবশ্যই ই-টিআইএন নিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে।

জানা গেছে, অর্থবিল অনুসারে, যদি কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা এর বেশি হয়; তবে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদেরও আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। এছাড়া বেতন কাঠামোর দশম বা সমতুল্য গ্রেড বা এর বেশি গ্রেডের বেতনধারীদের ই-টিআইএন নেয়া তো বাধ্যতামূলক। এমনকি সরকারি উৎসের এমপিওভুক্তির আওতায় কোনো চাকরিজীবীর মূল বেতন যদি ১৬ হাজার টাকা কিংবা এর বেশি হলেও ই-টিআইএন থাকতে হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে বলেন, এক সময় মানুষের মধ্যে কর দেয়ার ভীতি কাজ করতো। মানুষ মনে করতো করজালে গেলেই বিপদ। কর আদায়ের পরিসংখ্যানও তা-ই বলছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। জিডিপিতে আমাদের করের অবদানও অন্য দেশের তুলনায় কম। সরকার মনে করছে, অন্তত ৬০ লাখ লোক কর দিতে সক্ষম।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সকলে সাড়া দিয়েছেন। কর প্রদানে নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ততা আর রাজস্ব বোর্ডের করবান্ধব নীতির কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কর আদায়ে কঠোর পরিশ্রম করছে। অনেক সচ্ছল লোক আয়কর দেন না। যে সব সচ্ছল লোক আয়কর দেন না তাদের করের আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের জরিপ অব্যাহত থাকবে। এনবিআরের প্রত্যাশা চলতি অর্থবছরে মোট ১০ লাখ নতুন করদাতাকে করের আওতায় আনা হবে। করদাতাদের সেবা দিতে মেলার পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণে এনবিআর আরো বড় সাফল্য পাবে ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি, মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক বিভাগে ৫৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এমসি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিদায় ২০১৬ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh