• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

গুলশান হামলা

হাসনাত করিম-ই নাটের গুরু!

অনলাইন ডেস্ক
  ০৭ আগস্ট ২০১৬, ১৭:৫৫

গেল ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় চালানো সন্ত্রাসী হামলার পেছনে মূলত কারা ছিল তা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। ওই ঘটনায় রিমান্ডে থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম ও কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা এখন প্রায় নিশ্চিত যে হাসনাত করিম গুলশান হামলার অন্যতম নাটের গুরু।

এর আগে ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় গুলশান থেকে হাসনাত করিমকে এবং রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাহমিদকে গ্রেপ্তারে কথা জানায় পুলিশ।

হাসনাত করিম ও তাহমিদকে নিয়ে প্রথম দিকে গোয়েন্দারা কিছুটা ধোঁয়াশার মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে হাসনাতের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক ও কোরিয়ান নাগরিকের ধারণ করা স্থিরচিত্রে সেই ধোঁয়াশা কাটতে শুরু করে।

পুরো অপারেশন নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হামলা পরিচালনা ও মনিটরিং করেন হাসনাত করিম। হামলার আপডেট ও ছবি আদান প্রদান করেন দেশ ও দেশের বাইরে। আর তার এসব কাজে সহযোগিতা করেন কানাডা প্রবাসী ছাত্র তাহমিদ খান। এমনকি নিজ হাতে অস্ত্র চালিয়ে তাহমিদও এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয় বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

গোয়েন্দারা জানান, আর্টিজান রেস্টুরেন্টে যে রাতে হামলা হয় তার পরের দিন সকালে জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের সঙ্গে রেস্টুরেন্টের ছাদে ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় হাসনাত ও তাহমিদকে। তাদের এই অবস্থানের ভিডিও ও কিছু স্থিরচিত্র ধারণ করেন নিকটবর্তী একটি ভবনের বাসিন্দা দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক ডিকে হোয়াং। ওইসব ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ এবং হাসনাত করিমের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট হামলায় তাদের ভূমিকার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে গোয়ন্দাদের কাছে।

এর আগে জানা গিয়েছেল, হামলাকারীদের সহায়তার কথা গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন হাসনাত করিম। তবে তখন তিনি বলছিলেন, তাকে বাধ্য করা হয় হামলায় সহযোগিতা করতে।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আর্টিজানে হামলা শুরু হয় রাত ৮টা ৪৬ মিনিটে। এর কিছুক্ষণ পর ৮টা ৫৭ মিনিটে তৎপর হয়ে ওঠে হাসনাতের মোবাইল ফোনটি। বার্তা আদানপ্রদানের জন্য ব্যবহৃত উইকার ও থ্রিমাসহ অন্যান্য অ্যাপসও তিনি ওই সময় ডাউনলোড করেন নিজের মোবাইল ফোনে। এই অ্যাপসগুলোর মাধ্যমেই হামলার খবরা-খবর জানতে দেশ-বিদেশের নানা সংবাদ মাধ্যমের ওপর নজর রাখতে শুরু করেন হাসনাত। একইসঙ্গে রেস্টুরেন্টের বাইরে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ও বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে হামলাকারীদের সবশেষ তথ্য দিচ্ছিলেন তিনি। হামলায় নিহত বিদেশি নাগরিকদের ক্ষত-বিক্ষত দেহের ছবি পাঠানোর কাজেও হাসনাতের মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয়।

গোয়েন্দারা বলছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী গুলশান হামলার সমন্বয়কারী ছিলেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে আহত জঙ্গি রাকিবুল হাসানসহ গ্রেপ্তার থাকা জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তদন্তে পাওয়া

তথ্য অনুযায়ী, গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিরা প্রথমে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ভাড়া করা একটি বাসায় উঠেছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা হামলার দু’দিন আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাড়া করা বাসায় গিয়ে ওঠেন। ওই দিনই সেখানে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন তামিম চৌধুরী। ওই বৈঠকে আক্রমণকারীদের হামলার ছক বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপর ১ জুলাই রাতে ওই বাসা থেকেই পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালান।

গোয়েন্দারা আরো বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে গুলশানে হামলার পরিকল্পনা করেন জঙ্গিরা। এরই অংশ হিসেবে জঙ্গিরা প্রথমে ঢাকার তিনটি স্থানে মেস ভাড়া নিয়ে হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দেন। এরপর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের একটি চরে নিয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষকদের মধ্যে একজন হলেন রায়হান কবির ওরফে তারেক, যিনি কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত নয়জনের একজন। কল্যাণপুরের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তামিম চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ এরইমধ্যে গুলশানে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী এবং ব্লগার হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

চলতি বছরের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। ভোরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তাবাহিনী। এ সময় ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh