পুলিশের গাড়িতে চালকের আসনে কিশোর!
বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর বিচারের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশ এখন উত্তাল। আজ পঞ্চম দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে সব ধরনের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছে। এমনকি চালকরা লাইসেন্স দেখাতে না পারলে গাড়ি চালাতে দিচ্ছে না।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : নিরাপদ সড়ক ও বাবা-মা হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় মেঘ
--------------------------------------------------------
দেশের পরিস্থিতি যখন এমন, ঠিক সেই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, পুলিশের একটি লেগুনা প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে যান গাড়িটির মালিক। আর গিয়ে দেখেন লেগুনাটির চালকের আসনে এক কিশোর। বুঝতে আর বাকি নেই যে তার বয়স ১৮ এর নিচে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকাই স্বাভাবিক। এতে ওই ব্যক্তি আরও ক্ষেপে যান এবং ক্ষতিপূরণ চাইলে লেগুনায় থাকা এক পুলিশ কনস্ট্যাবল এবং এক আনসারের সঙ্গে তার তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ওই গাড়ির মালিক কিশোর ড্রাইভারকে লেগুনা থেকে নামাতে চাইলে ওই পুলিশ সদস্যরা বার বার বাধা দেন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই গাড়ির মালিক পুলিশকে প্রশ্ন করছেন- আপনারা বাচ্চা দিয়ে কেন গাড়ি চালাচ্ছেন? জবাবে আনসার সদস্যকে বলতে দেখা যায়, ‘ড্রাইভার একটু সামনে গেছে, তিনি আসছেন। রোডে বের হলে গাড়িতে একটু ঘষা লাগবেই।’
ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিক বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কিশোরকে দিয়ে আপনারা (পুলিশ) গাড়ি চালাচ্ছেন ওই ড্রাইভার আমার গাড়ি ঠিক করে দেবে এবং ক্ষতিপূরণ দেবে। আপনারা ডিউটি করেন ড্রাইভার ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাবে। আসলে আপনারা তিনজন পুলিশই এই ঘটনার জন্য দায়ী।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, একেবারে শেষ পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ড্রাইভারকেই আটক করে পুলিশের লেগুনা উঠানো হয়।
তবে ভিডিওতে আনসার অভিযোগ করেন, লেগুনাটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়ায় প্রাইভেটকারের মালিক ওই কিশোরকে দুই-একটি চড় থাপড় দিয়েছে।
এদিকে এই ভিডিওকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। ফেসবুকে অনেকে মন্তব্য করেন পুলিশই যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে বাকিরা কী করবে?
অনেকে বলেন, পুলিশের উচিত ছিল কোনও অবস্থাতেই ওই কিশোর দিয়ে গাড়ি না চালানো।
এ বিষয় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা বিষয়টি জানতাম না। এখন ভিডিওটি দেখলাম। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। সম্ভবত গাড়িটি পুলিশের না।
এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে, এটি পুলিশের নিজস্ব কোনও গাড়ি নয়। মাঝে মাঝে থানার আশপাশের এলাকা টহল দেয়ার জন্য ছোট গাড়ি বা লেগুনা রিকুইজিশন নেয়া হয়। এটা সেই রকমই কোনও ঘটনা হবে। পুলিশের গাড়িতে ডিএমপির লোগো থাকবে। সেই গাড়ি পুলিশের লোক চালাবে। এছাড়া সাধারণ পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি শুধু গোয়েন্দা বাহিনী চালায়। তারাও গোয়েন্দা বাহিনীর নিয়োগপ্রাপ্ত লোক। অপেশাদার কোনও লোক পুলিশের কোনও গাড়ি চালানোর সুযোগ নেই।
জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশের প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়ি কম সেটা অনেক পুরনো অভিযোগ। যতগুলো আছে সেসবের অধিকাংশ অবস্থাও খারাপ। তাই রাজধানীসহ সারাদেশের সব থানা পুলিশই রিকুইজিশন করা গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছে, এই রিকুইজিশন করা গাড়ি নিয়ে পুলিশ যখন রাস্তায় বের হয় তখন সেই গাড়ির দায়-ভার কার? পুলিশ চাইলেই কি সবকিছু করতে পারে? আইন কি দুই রকম?
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আইন সবার জন্য সমান। যখন কোনও নিময় বা আইন করা হয় সেটি সবারই মেনে চলা উচিৎ। যখন পুলিশ টহল দেয়ার প্রয়োজনে কোনও গাড়ি রিকুইজিশন নেয়, সেটির ফিটনেস ঠিক আছে কিনা বা গাড়ির ড্রাইভার একজন পেশাদার ড্রাইভার কিনা সেই বিষয় নিশ্চিত হতে হবে। এই রকম গাড়ি পুলিশের ব্যবহার করা উচিৎ না। এটা আইন ভঙ্গের সমান।
এসএস/সি
মন্তব্য করুন