• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

প্রতি দুর্ঘটনায় ঝরে ১ জনের প্রাণ

মিথুন চৌধুরী

  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:৪২

সড়ক দুর্ঘটনা যেনো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলেও ঠেকানো যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯ হাজার ৯৯৫টি। এতে দুর্ঘটনাস্থলেও হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এছাড়া আহত হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫ জন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও নিসাচা’র গড় হিসেব থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

গেলো ২২ দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা হয়েছে অন্তত ২৪০ জন। দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯০টি। আহত হয়েছে চার শতাধিক। শুধুমাত্র ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনেই প্রাণ হারিয়েছে ১১৩ জন।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশজুড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২১টি। এতে নিহত হয়েছে প্রায় ৩৪৬ জন। আহত হয়েছে ৫৩১ জন। ২০১৬ সালে দেশজুড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৭৬৫টি। এতে নিহত হয়েছে প্রায় 8০৭১ জন। আহত হয়েছে ৭২৩১ জন। ২০১৫ সালের মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ২৬২৬। নিহত হয়েছে ৩৮২৬ জন। আহত হয়েছে ৬১৯৭ জন। ২০১৪ সালের মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ২৭১৩। নিহত হয়েছে ৪৫৩৬ জন। আহত হয়েছে ১০৭৭০ জন।

চালকের উদাসীনতা ও মালিকের নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রার টার্গেটে অকালে দুর্ঘটনায় ঝড়ে যাচ্ছে প্রাণ। আর যারা বেঁচে যান তারা পঙ্গুত্তের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকছে। ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, যত্র-তত্র গাড়ি পার্কিং করা, নির্দিষ্ট স্থান ব্যাতিরেকে যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো এবং নামানো, ওভারটেকিং করা, পাল্টাপাল্টি করে বা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বা মাল বোঝাই করা, গাড়ি ছাদে যাত্রী বহন করা, ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহার না করা, হেলমেট ছাড়া রাস্তাপার হবার সময় সচেতন না হওয়া, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো এবং মহাসড়ক ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে যাওয়াই এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করছে নিরাপদ সড়ক চাই।

দেশে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ যানবাহনের মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রয়েছে ৩ লাখের বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসেবে, সারাদেশে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং এ ধরনের যানের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৩০। এর সব ক’টির সামনে-পেছনে লাগানো হয়েছে অতিরিক্ত কাঠামো (বাম্পার)। আবার বডির দুই পাশে লাগানো হয় তিন কোনা বড় আকৃতির লোহার পাতের অ্যাঙ্গেল ও লোহার হুক।

নিরাপদ সড়ক চাই চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চণ বলেন, মোটরযান আইন অনুসারে, মূল কাঠামো বা আকৃতি পরিবর্তন ও পরিবর্ধন অবৈধ। পরিবর্তিত কাঠামো নিয়ে কোনো যানবাহনের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ পাবার সুযোগ নেই। কিন্তু বিআরটিএ দীর্ঘদিন ধরে এসব যানের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ দিয়ে আসছে। এখন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় এসব বিষয় আলোচনায় আসছে। বাস-ট্রাক মূল কাঠামোয় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর ধর্মঘট আর চাপের কারণে দুই দফা সময় বৃদ্ধি করেও সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে।

তিনি বলেন, যাত্রী, মালিক, চালকদের নিয়ে সরকারকে আমরা নানান বিষয়ে সুপারিশ করছি। যদি আমাদের সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে যানবহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনতো তাহলে এতো পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটতো না। তবে সরকার একেবারে কাজ করেনি তাও না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএতে রোড সেইফটি ইউনিট গঠন, ২২টি জাতীয় মহাসড়কে ত্রিহুইলার অটোরিকশা, নছিমন করিমন উচ্ছেদ, বেশ কয়েকটি জাতীয় মহাসড়কের ২ লাইন ৪ লাইন চালু করা, সড়ক বিভাজক স্থাপন, আন্ডারপাস-ওভারপাস নির্মাণ, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তবে অবৈধ ওভারটেকিং এবং ওভার স্পিডের কারণে ৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় চালকরাও মারা যাচ্ছেন। এতে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে দুর্ঘটনায় নিহতের প্রায় ৫২ ভাগই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশে কাজ করছে বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় ডজন খানেক সংস্থা। গণমাধ্যমেও নিয়মিতই ফলাও করে প্রচার করছে দুর্ঘটনার সংবাদ। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালাও পেশ করছে সরকারের কাছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও দাবি করছে সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক কঠোর। পরামর্শ অনুসারে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও তুলনামূলকভাবে কমছেনা সড়ক দুর্ঘটনা। দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল।

অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ও সংগঠনগুলো চালকদের উপর দায় চাপাচ্ছেন। তবে চালকরা বলছেন অন্য কথা। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চলাচলকারী একটি দূরপাল্লার গাড়ির ড্রাইভার এহসান উল্লাহ বলেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাসড়কে বাস চালাচ্ছি। বাংলাদেশে বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রমজনিত ঘুম। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা একজন চালককে ডিউটি করতে হয়। সারারাত ডিউটি করার পর আবার পরদিন সকালে গাড়ি চালাতে হয়। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ এক সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, একজন চালককে ডিউটি যদি সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা করে দেয়া হয় তাহলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।

এমসি/এইচএম/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh