• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভাইরাসের ফাঁদে পরিবেশ

মিথুন চৌধুরী

  ১৪ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:১৫

ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে হাসপাতালের বর্জ্য। হাসপাতালের ভেতরে আলাদা আলাদা জারে এসব বর্জ্য রাখা হলেও ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে মিশিয়ে। ফলে বাতাসের প্রভাবে শরীরে সংক্রমিত হচ্ছে জন্ডিস, চর্মসহ নানা রোগের ভাইরাস। এতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে রাজধানীবাসীর মধ্যে।

নিত্যদিন রাজধানীতে ৩শ’ টনের বেশি হাসপাতাল বর্জ্য ফেলা হয় ডাস্টবিনে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ ধরনের বর্জ্য ইনসিনেরেটর মেশিনে পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও তা মানছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সুই, সিরিঞ্জ, স্যালাইন প্যাকেট, ক্যানুলা সেট, তরল ওষুধের শিশি, বোতলের ছিপি, রক্ত, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, শল্যবিদদের ব্যবহৃত ছোট ছুরি, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিছিন্ন বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের টুকরা ও ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিক্যাল রি-এজেন্ট সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে ডাস্টবিনেই ফেলা হচ্ছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বাইরের ডাস্টবিন থেকে এক শ্রেণির দরিদ্র শিশু-কিশোর প্রতিদিন কোনো প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে খালি হাতে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য কুড়ায়।

জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ৫ বছর মেয়াদি কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ কর্ম-পরিকল্পনার আওতায় ৬৪ জেলা হাসপাতালে মেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড ডিসপোজাল ইউনিট স্থাপন, দরকারি জনবল তৈরি ও হাসপাতাল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পরিবহন কেনার প্রক্রিয়ার কথা জানা যায়। তবে পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার তেমন মিল পাওয়া যায় না।

গবেষণা জরিপে দেখা যায়, রাজধানীতে গড়ে নিত্যদিন ৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৩শ’ টন হাসপাতাল বর্জ্য। তরল ও কঠিন দু’ধরণের হাসপাতাল বর্জ্যের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

হাসপাতাল বর্জ্য রুলস ২০০৮ অনুসারে, যেকোনো নতুন হাসপাতাল স্থাপনের অনুমতি পাবার পূর্বশর্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক।কিন্তু বেশিরভাগ হাসপাতালের পরিবেশ ছাড়পত্র নাই। এতেও তেমনটা মনিটরিং নাই।

সরকারি হাসপাতাল অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক শ্রেণির কর্মচারি ঝুঁকিপূর্ণ কিছু হাসপাতাল বর্জ্য বিক্রি করে। পরে সেগুলো রি-সাইক্লিং’র মাধ্যমে রি-প্যাকিং হয়ে বাজারে বিক্রি হয় বলে একাধিক সূত্র জানায়।

বর্তমানে বেশকিছু সংখ্যক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব পালন করছে প্রিজম নামের প্রতিষ্ঠান। তারা হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন রংয়ের (লাল, কালো ও হলুদ) ড্রাম থেকে নানা ধরণের বর্জ্য নিয়ে ডেমরা ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে ফেলে ও দরকার হলে ইনসিনেরেটর মেশিনে পুড়িয়ে দেয়। তবে বেশিরভাগ হাসপাতাল বর্জ্য ওখানে খোলাভাবে রাখা হচ্ছে। ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে রোগজীবানু। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

২০১১ সালের মে’তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান পরিপত্রে হাসপাতাল বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন।সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলার কারণে শিশু শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি ও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নেরও সুপারিশ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আইন প্রণীত হয়নি।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল বর্জ্য। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বর্জ্য উৎপত্তিস্থল থেকে আলাদা না করার ফলে তা জীবাণুমুক্ত ও ঝুঁকিহীন সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে পুরোটি পরিণত হচ্ছে সংক্রামক এবং ক্ষতিকর বর্জ্যে। মেডিক্যাল বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিস ‘বি’ হেপাটাইটিস ‘সি’ যক্ষা, ডিপথেরিয়া, এমনকি এইডসের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি ও ঝুঁকি কমাতে হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত ও অব্যবস্থাপনা দূর করা জরুরি। একটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য ঠিক মতো ব্যবস্থাপনায় না আনতে পারলে নানা রোগ জীবাণু ছড়াবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি হবে। সেবা গ্রহণকারী ও সেবা প্রদানকারী পরিবেশ সব স্থানে প্রযোজ্য। এজন্য একটা সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh