নিজাম হাজারীর এমপি পদ নিয়ে হাইকোর্টের বিভক্ত রায়
অস্ত্র মামলায় সাজা কম খেটে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসায় ফেনী-২ আসনের সরকারদলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য পদ নিয়ে বিভক্ত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিভক্ত রায় দেন। বিচারপতি মো. এমদাদুল হক সংসদ সদস্য পদ অবৈধ ঘোষণা করেন। তবে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান তাতে ভিন্ন মত পোষণ করেন।
এর আগে গেলো ১ ডিসেম্বর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৬ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছিল।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।’
পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। রিট আবেদনে বলা হয়- সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দু’বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গেলো ৩ আগস্ট এ রুলের শুনানি শেষে ১৭ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছিল। তবে বিচারিক আদালতের একটি নথি না আসায় রায়ের দিন পিছিয়ে ২৩ আগস্ট করা হয়।
কিন্তু অস্ত্র মামলায় বিচার শুরুর আগে নিজাম হাজারী কতোদিন জেল খেটেছেন সে বিষয়ে নথি না পাওয়ায় সেদিনও রায় দেননি আদালত। ২৩ আগস্টের আগেই সেটি দাখিল করবেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার এবং এর ভিত্তিতে ওইদিন রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২৩ আগস্ট ওই নথিটি দাখিলের পর সেটি নিয়ে শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন পুনর্নিধারণ করেন হাইকোর্ট।
নির্ধারিত তারিখে (৩০ আগস্ট) রায় ঘোষণা করছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এর মধ্যে কারাগারে রক্তদান করায় নিজাম উদ্দিন হাজারী কতোদিন সাজা রেয়াত পেয়েছিলেন, সে প্রশ্ন ওঠায় তা স্থগিত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। পরে এ বিষয়ে গেলো ৩ নভেম্বর প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২২ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। পঞ্চমবারের মতো রায়ের দিন পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর ধার্য করা হয়।
কিন্তু ওইদিনও রায় না দিয়ে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় ১৯৯১ সালের ২৪ জানুয়ারি দায়ের করা মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে চান বিচারক। কারণ নিজাম হাজারী ঠিক কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সে বিষয়ে আদালতের নথিতে দু’রকম তথ্য ছিল।
১ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর শুনানি শেষে ৬ ডিসেম্বর রায়ের দিন ধার্য করা হয়। অবশেষে ফেনী-২ আসনের সরকারদলীয় নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য পদ অবৈধ ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।
এসএস/ এস
মন্তব্য করুন