আসছে গরু, জমেনি হাট
পবিত্র ঈদ-উল-আজহার আর মাত্র বাকি আছে ৫ দিন। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে (২২ আগস্ট) মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি করবেন। ঈদকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেছে পশু। ঈদের তিন দিন আগে থেকে সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত হাটে পশু ওঠার কথা থাকলেও পশু আসছে সময়ের আগে। বেচা-কেনা শুরু না হলেও চলছে নানান প্রস্তুতি।
শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটজুড়ে ঈদের আমেজ। নানা রঙে সাজানো হয়েছে হাটের ব্যানার ও গেট। ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন হাটের ইজারাদাররা।
রাজধানীতে এ বছর মোট ২৩টি পশুর হাট বসেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩টি হাট বসেছে। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও নিজ উদ্যোগে অনেককে গরু বিক্রি করতে দেখা যায়।
------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ভোগান্তি নিয়েই ট্রেন-বাসে বাড়ি যাচ্ছেন ঈদ যাত্রীরা
------------------------------------------------------------------
ঢাকা দক্ষিণের শাহজাহানপুর হাট ঘুরে জানা গেছে, কুরবানির ঈদ উপলক্ষে এ হাটের পরিধি আরও বাড়ছে। বেপারিরা তাদের পশুগুলো নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। তবে হাটের বর্ধিতাংশের তাঁবু টানানো ও গেটের সাজসজ্জার কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু কোরবানির ঈদ কাছাকাছি হলেও হাটে গরু কেনাবেচায় উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়নি। মাঝে মাঝে দু’একটি গরু ভর্তি ট্রাক আসছে। ক্রেতা কম থাকলেও দেশের পশ্চিমাঞ্চলের খামারিরা তাদের গরু-ছাগল নিয়ে এরইমধ্যে হাটে এসেছেন।
মহানগরীর হাটগুলোতে এবার ২০ থেকে ২২ লাখ গবাদিপশু ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে হাট ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে ১৫টি গরু এনেছি। সবগুলো নিজের পালা দেশীয় গরু। এক একটি গরু ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করবো। তবে দুইদিন পেরিয়ে গেলেও কোনও ক্রেতা দাম বলেননি। গরুগুলো আনতে ২৫ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া খরচ হয়েছে। গেল বছর ১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছিল। এবার চেষ্টা করবো ক্ষতি পোষাতে। যদি প্রত্যাশিত দামে গরু বিক্রি করতে না পারি তাহলে গরু পালা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
পাবনা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী রহিম শেখ বলেন, তিন ভাই মিলে ১৫টি গরু এনেছি। প্রতিটি গরু ১ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করবো। খুঁটি ভাড়া দিচ্ছি। ১০ টাকা করে প্রতি বালতি পানি খাওয়াচ্ছি। সঙ্গে করে গরুর খাবারও এনেছি। প্রতিদিন প্রতি গরুর পেছনে ৪শ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু বাজারে এখনও তেমন ক্রেতা দেখছি না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বসা হাটগুলো হলো- উত্তরা ১৫ নং সেক্টর, ৩০০ ফুট সড়কের উত্তরে বসুন্ধরা হাউজিং, খিলক্ষেত বনরূপা, ভাটারা (সাইদ নগর), ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের খেলার মাঠ, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক, মিরপুর সেকশন-০৬ ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর ডিওএইচএস উত্তরের খালি জায়গা ও উত্তর খান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং। তবে এবার আফতাবনগরে কোনও পশুর হাট নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর বালুর মাঠ, মেরাদিয়া, উত্তর শাহজাহানপুর, কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের জায়গা, ঝিগাতলা, রহমতগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আরমানিটোলা, ধূপখোলা, পোস্তগোলা, দনিয়া কলেজ, শ্যামপুর ও ধোলাইখাল।
প্রতিটি হাটে আনসার, পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের তৎপরতা দেখা যায়। অনেক হাটে পুলিশ ওয়াচ টাওয়ারও বসিয়েছে। রাজধানীর পশুর হাটে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে যে সব ট্রাক আসছে, সে সব ট্রাকের সামনে কোন হাটে গরু নেয়া হবে তার ব্যানার লাগাতে হবে। এটা লাগানো হলে বিভ্রান্তি দূর হবে এবং কেউ জোর খাটাতে পারবে না।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির দেয়া খাবার-দাবার খেয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই আমরা হাটকেন্দ্রিক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জালটাকার কোনোমতেই যেন বিস্তার ঘটতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।
প্রতিটি হাটে জাল টাকা রোধে বসানো হয়েছে ব্যাংকের বুথ। জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের সহায়তায় অভিজ্ঞ ক্যাশ কর্মকর্তা দিয়ে কুরবানির হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ীদের বিনা খরচে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা দিতে এরইমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন :
এমসি/পি
মন্তব্য করুন