• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিরামহীন ৩৫ বছর

আরটিভি অনলাইন

  ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:০২

১৯৮১ সাল। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে নেতা নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে দলটি। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। ওই সময় তিনি ছিলেন ভারতের নয়াদিল্লীতে। ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে তিনি ১৭ মে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন।

দলের কাণ্ডারির দায়িত্ব নিয়ে শুরু করেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক সংগ্রাম। জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। তারই নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।

দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হবার পর ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি সোচ্চার ছিলেন বিএনপি সরকারের দুঃশাসন আর নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার বাধ্য হয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন দিতে।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন সরকার। তার সরকারের অন্যতম সাফল্য ছিল পার্বত্য শান্তি চুক্তি। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিও ওই সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

২০০১ সালে বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। সরকার গঠন করে বিএনপি-জামায়াতের ৪ দলীয় জোট আর এবং দ্বিতীয় বারের মতো বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বেশ কয়েকবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। তবে সব অপচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিয়ে জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন শেখ হাসিনা।

এরপর আসে আলোচিত-সমালোচিত এক-এগারো। তথাকথতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরের শাসনামলে গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনাকে। রাজনীতিতে সৃষ্টি হয় নেতৃত্বশূন্যতা। হুমকির মুখে পড়ে দেশের গণতন্ত্র। গণরোষের মুখে এক পর্যায়ে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার। বিরাজমান গণতন্ত্রের সঙ্কট কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। গণতন্ত্রের নতুন এ সন্ধিক্ষণে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নতুন এক যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ।

সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং অসাধারণ ধীশক্তির স্বীকৃতি হিসেবে বহু আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্মানসূচক ডক্টর অব ল-ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়-জাপান, ডক্টর অব লিবারেল আর্টস-এবারেট ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়-যুক্তরাজ্য, দেশিকাত্তোম-বিশ্বভারতী-ভারত, সম্মানসূচক ডক্টর অব ল-অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-অস্ট্রেলিয়া, সম্মানসূচক ডক্টর অব হিউমান লেটার্স-ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়-যুক্তরাজ্য।

২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে শেখ হাসিনা।

২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ওই বছরেই ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করে। এতে ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা।

বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ওরা টোকাই কেন?, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য বিমোচন-কিছু ভাবনা, আমার স্বপ্ন-আমার সংগ্রাম, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় শেখ হাসিনা। জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়।

শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সব গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৬৮ সালে খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ এম.এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। পরবর্তী ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় দু'বোনকেই।

একনজরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন

প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দী শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রথম সম্মেলন : ২৩-২৪ জুন ১৯৪৯। সভাপতি : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক : শামসুল হক।

দ্বিতীয় সম্মেলন : ১৪-১৬ নভেম্বর ১৯৫৩। সভাপতি : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান।

তৃতীয় সম্মেলন : ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫। সভাপতি : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান।

চতুর্থ সম্মেলন : ৭-৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭। সভাপতি : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান।

বিশেষ সম্মেলন : ১৩-১৪ জুন ১৯৫৭। মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান।

পঞ্চম সম্মেলন : ৬-৮ মার্চ ১৯৬৪। সভাপতি : মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, সাধারণ সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান।

ষষ্ঠ সম্মেলন : ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। সভাপতি: শেখ মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক : তাজউদ্দীন আহমদ।

সপ্তম সম্মেলন : ১৯ আগস্ট, ১৯৬৭। সভাপতি : শেখ মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক : তাজউদ্দীন আহমদ।

অষ্টম সম্মেলন : ৪ জুন, ১৯৭০। সভাপতি : শেখ মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক : তাজউদ্দীন আহমদ।

নবম সম্মেলন : ৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২। সভাপতি : শেখ মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক : জিল্লুর রহমান।

দশম সম্মেলন: ১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪। সভাপতি : এ এইচ এম কামারুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক : জিল্লুর রহমান।

১১তম সম্মেলন : ৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭। আহ্বায়ক : সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন।

এর আগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।

১২তম সম্মেলন : ৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮। সভাপতি : আবদুল মালেক উকিল, সাধারণ সম্পাদক : আবদুর রাজ্জাক।

১৩তম সম্মেলন : ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাক বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।

১৪তম সম্মেলন : ১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

১৫তম সম্মেলন : ১৯-২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : জিল্লুর রহমান।

১৬তম সম্মেলন : ৬-৭ মে, ১৯৯৭। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : জিল্লুর রহমান।

১৭তম সম্মেলন : ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : আবদুল জলিল।

১৮তম সম্মেলন : ২৪ জুলাই ২০০৯। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

১৯তম সম্মেলন : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২। সভাপতি : শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

২০তম সম্মেলন : ২২-২৩ অক্টোবর ২০১৬ । সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক : ওবায়দুল কাদের।

আরকে/এএইচ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh