• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৩ মার্চ ২০১৮, ১০:৫০

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির চার ক্রুসহ ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বর্ণনা করেছেন ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য হিমালয়ান টাইমস।

নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে বললেন আমান্ডা সুমারস নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী। আমান্ডা সুমারস মূলত মার্কিন নাগরিক। চাকরি-সূত্রে থাকেন নেপালে। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই তার অফিস ও বাসা। উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন সুমারস বাসার ছাদে ছিলেন। বিধ্বস্ত হওয়া ও এর পরবর্তী পরিস্থিতি দেখেছেন তিনি।

তার বর্ণনায়, ‘খুবই নিচ দিয়েই উড়ছিল উড়োজাহাজটি। দেখে ভাবলাম, এটি পর্বতের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের শব্দ। এক-দুই সেকেন্ডের ব্যবধানে আবার বিস্ফোরণ। এরপর নগরীর আকাশ ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। বিমানবন্দরের দিকে সেনাসদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা ও অগ্নিনির্বাপকদের দৌড়াদৌড়ি। আহতদের বাঁচানোর আবেদন। লাশবাহী গাড়িতে নিথর মরদেহ তোলা এবং হা-হুতাশ।’

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: বিবাহবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে লাশ হলেন শশী
--------------------------------------------------------

প্রায় একই বর্ণনা পাওয়া যায় কেয়াল নামের এক নেপালি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। অভ্যন্তরীণ এক ফ্লাইটে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তিনি। এই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘উড়োজাহাজটি খুবই নিচ দিয়ে উড়ছিল। এটা যারা দেখেছে, সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল। আপনিও দেখলে বলতে বাধ্য হতেন যে, এটা স্বাভাবিক অবতরণ নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা রানওয়ের ঠিক কাছেই অবতরণ করে এবং অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় এবং আগুনের সূত্রপাত হয়। নিজের চোখে দেখেও কয়েক মিনিট অনেকে বুঝতে পারছিলেন না যে, কী হচ্ছে! এটা ছিল খুবই ভয়াবহ এক ব্যাপার।’

একজন নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিমান বিধ্বস্তের মুহূর্তটি প্রকাশ করেছে নেপালি টাইমস। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনালের পশ্চিমে সিনামাঙ্গাল এলাকা থেকে তিনি দুর্ঘটনাটি দেখতে পান।

নেপালি টাইমসকে ওই ব্যক্তি বলেন, বমবার্ডিয়ার কোম্পানির তৈরি বিমানটিকে তিনি দক্ষিণ দিক থেকে এগিয়ে যেতে দেখেন। কিন্তু বিমানটি অবতরণের পরিবর্তে হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে বামে দিক তীক্ষ্ণ বাঁক নেয়।

দুর্ঘটনার সময় ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করছিলেন নেপালের সেনাসদস্য বালকৃষ্ণ উপাধ্যায়। বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্তটিকে তিনিও ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, ‘হঠাৎ করেই উড়োজাহাজটি একটি শূন্য মাঠের খুব নিচ দিয়ে ছুটতে শুরু করে। এরপর রানওয়ের পাশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। একইসঙ্গে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকে। এ সময় চূর্ণবিচূর্ণ বিমানটির কাছে দৌড়ে যান উদ্ধারকারীরা। তখন বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ভেতর থেকে নেপালি যাত্রীরা ‘আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও আমাকে’ বলে চিৎকার করছিলেন। আর বাংলাদেশি যাত্রীরা ইংরেজিতে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমাকে সাহায্য কর, দয়া করে আমাকে সাহায্য কর’।

পর পর দুই বার বিস্ফোরণের পর পরই উড়োজাহাজটি আচড়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন ঘটনার আরও এক নেপালি প্রত্যক্ষদর্শী কৈলাশ অধিকারী।

কৈলাশ অধিকারী ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি জ্বালানি কোম্পানিতে কাজ করেন। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তিনি ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলেন। তার ভাষায়, ‘পর পর দুই বার বিকট শব্দ হয়। শব্দের উৎসের খোঁজে এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারি, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর অগ্নিনির্বাপকরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা আরও আগে আসতে পারলে আরও বেশি মানুষকে বাঁচানো যেতো।’

এ ঘটনায় আহত হয়ে বেঁচে যাওয়া একজন হচ্ছেন বাসন্ত বোহোরা। যিনি নেপালের রশিতা ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-এ কর্মরত আছেন। দুর্ঘটনার পরে তিনি ত্রিপলি-ভিত্তিক নরভিচ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি জানান বিমান দুর্ঘটনার আগে ভেতরের চিত্র। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যাত্রা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু কাঠমান্ডুতে যাওয়ার জন্য ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টিআইএ) কাছে পৌঁছতেই এটি অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করে।হঠাৎ করেই বিমানটি ভেঙে পড়ে এবং প্রচণ্ড শব্দ হয়। তিনি বলেন, আমি জানালার কাছে বসে ছিলাম তাই জানালা ভেঙে বের হয়ে আসতে পেরেছি।’

বাসন্ত বোহোরা আরও জানান, প্লেন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমার কোনো স্মৃতি ছিল না। কেউ আমাকে সিনামঙ্গলী হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানে থেকে আমার বন্ধুরা আমাকে নরভিকে নিয়ে যায়।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ফ্লাইটটিতে ৪ ক্রু এবং ৬৭ যাত্রী মিলে ৭১ জন যাত্রী ছিলেন।

আরও পড়ুন:

ফউ/এপি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নিয়োগ দেবে ইউএস-বাংলা, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন
এসএসসি পাসে ইউএস-বাংলায় চাকরি, লাগবে না অভিজ্ঞতা
ইউএস-বাংলায় নিয়োগ, আবেদন অনলাইনে
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে চাকরি, নেবে একাধিক জন
X
Fresh