পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার সময় এসেছে
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। প্রায় এক হাজার পাকিস্তানি সেনা ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। ওই ঘটনার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে। তারপরও জোড়া লাগেনি দুই দেশের ভাঙা সম্পর্কের। পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পর্ক উন্নয়নে কয়েকবার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বর্তমান সরকারকে এ ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
২০১২ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানীকে বাংলাদেশে পাঠায় পিপিপি সরকার। তিনি ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিতব্য ডি-এইট সম্মেলনে যাবার জন্য আহ্বান জানান।
কিন্তু ওই সময় পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের কাছে ১৯৭১ সালে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশের জন্য যে দাবি কয়েক দশকের। আর ওই কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেসময় পাকিস্তানের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করা হয়।
তবু এক বুক আশা- নিকট ভবিষ্যতে এই বৈরিতার বরফ গলবে। দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
উপরের এসব কথা বলছিলেন মার্কিন আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপের বিশ্লেষক উজাইর ইউনুছ।
‘পাকিস্তানকে এখন বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে’ শিরোনামে আজ শনিবার দ্য ডিপ্লোমেট নামের একটি অনলাইনের মতামত কলামে তার এ মন্তব্য প্রকাশ করা হয়।
ওই কলামে জানানো হয়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ যখন যুদ্ধাপরাধের জন্য আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখনই দুই দেশের মধ্যে আবারো চিড় ধরা শুরু হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাকে বিজয় দিবসের চারদিন আগেই ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বান্দ্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় নিন্দা জানায়। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার ওই সময় বলেন, মর্মান্তিক ওই ঘটনায় পুরো পাকিস্তান গভীরভাবে শোকাহত।
এদিকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের মে মাসে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ওই সময়ও বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়া জানায় পাকিস্তান।
এ ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে নাক না গলানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলামাবাদের অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সার্কের সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো তলানিতে পৌঁছায়।
কিন্তু মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট পাকিস্তানকে আবারো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ করে দিয়েছে। মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যেটা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ ঠিকই এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের কুতুপালং ভ্রমণ করেন। ওই সময় তিনি বলেন, আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি। সেখানে আরো ২/৫/৭ লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারব।'
রোহিঙ্গাদের প্রতি এসময় সারাবিশ্ব সহানুভূতি দেখায়। পাকিস্তানিরাও সেই সহানুভূতির পথে ছিল। কিস্তু পাকিস্তান সরকার যদি শেখ হাসিনার এই রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়ার উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিতো বা রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়াতো, তাহলে হয়তো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শিথিল হওয়ার প্রক্রিয়া আবারো শুরু হতে পারতো।
পাকিস্তানকে সেই সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত ছিল। কিন্তু পাকিস্তান তা করেনি। ১৯৭১ সালে তারা যে পরিচয় দিয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও সেই একই মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। তাই তাদের উচিত, বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। আর সে সময় এখনই।
এসআর/সি
মন্তব্য করুন