• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

খান আতাকে পুনরায় 'রাজাকার' দাবি করে যা বললেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৪৮

সম্প্রতি নিউইয়র্কে সংস্কৃতিকর্মীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কৃতী চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীত পরিচালক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানকে রাজাকার বলে দাবি করেছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। এরপরেই শুরু হয় বিতর্ক। তবে রোববার নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন এই নাট্যজন।
তিনি বলেন, খান আতাউর রহমান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ অপারগ হয়েছিলেন। যে ৫৫ জন বুদ্ধিজিবী ও শিল্পী ১৯৭১ -এর ১৭ মে মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের চরমপন্থীদের কাজ বলে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছিলেন। দু:খজনকভাবে খান আতাউর রহমান তার ৯ নম্বর সাক্ষরদাতা ছিলেন। (১৭ মে ১৯৭১ দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকা)
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার ড. নীলিমা ইব্রাহীমকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলেন রেডিও টেলিভিশনে পাকিস্তানীদের প্রচারকার্যে সহযোগিতাকারীদের শনাক্ত করার জন্য। ১৯৭২ এর ১৩ মে নীলিমা ইব্রাহীম কমিটি যে তালিকা সরকারকে পেশ করেন, সে তালিকায় ৩৫ নম্বরের নামটি খান আতাউর রহমানের। তালিকাভুক্তদের সম্পর্কে কমিটির সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তালিকাভুক্ত শিল্পীদের ৬ মাস পর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করা হয়।(বাংলাদেশ বেতার তথ্য মন্ত্রণালয়ের নং জি ১১। সি-১।৭২।১৬/৬/৭২)
তিনি আরো লিখেছেন, একথা অনস্বীকার্য যে খান আতাউর রহমান একজন গুণী শিল্পী। তার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নাই। মুক্তিযুদ্ধপূর্বকালে তাঁর চলচ্চিত্রসমূহ আমাদের ঋদ্ধ ও উজ্জিবীত করেছে। যেমন, "সোয়ে নাদীয়া জাগো পানি" "নবাব সিরাজদৌলা" সহ অনেক চলচ্চিত্র। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং তা তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। আবার আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান, শহীদউল্লাহ কায়সারের মত শিল্পী সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধে অংশনিয়েছিলেন তাঁদের স্বীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবং শাহাদাত বরণ করেছেন।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, অনেকের মনে প্রশ্ন উদ্রেক হয়েছে যে, '৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অব্যহতিতে কেন আমি বা আমরা তাঁকে রক্ষা করেছিলাম। কারণ খান আতাউর রহমান কোন প্রকার মানবতা বিরোধী কর্মে লিপ্ত ছিলেন না যদিও পাকিস্তানীদের সমর্থনে রেডিও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন। আর খান আতাউর রহমান একজন শিল্পী এবং ৯ মাসে তাঁর কর্ম সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। তাছাড়া আমরা এও ভেবেছি ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অনেকে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছে। আমরা তা বিচারের এখতিয়ার রাখিনা। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের এ কথা বাধ্যতামূলক মানতে বলা হয়েছিল যে কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধোত্তর সময়ে কাউকে ক্ষতি বা আঘাত করা যাবেনা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্তদের বিচার করা হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। মুক্তিযোদ্ধারা সেই আদেশ পুরোপুরি ভাবে মেনেছিলো বিধায় যুদ্ধোত্তরকালে প্রাণহানির ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম হয়েছিল। জেনেভা কনভেনশন মুক্তিযোদ্ধারা পুরোপুরি মেনেছিলো কিন্তু পাকিস্তানীরা জেনেভা কনভেনশনের তোয়াক্কা করেনি।
তিনি আরো জানান, আমার মূল বক্তব্যে নয়, এক প্রশ্নের উত্তরে ইতিহাসের দায় থেকে আমি খান আতাউর রহমান সম্পর্কে উক্তিটি করেছিলাম। খান আতাউর রহমান একজন সৃষ্টিশীল মানুষ কিন্তু ১৯৭১ সালে তিনি দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমার তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই শিল্পী হিসাবে তাঁর প্রশংসা করি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালে তার নিন্দনীয় ভূমিকার সমালোচনা তো করতেই পারি- যোগ করেন তিনি।
এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh