• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পঞ্চগড়-১ : আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক, সক্রিয় জাসদ, চুপচাপ বিএনপি

রাজিউর রহমান রাজু, পঞ্চগড়

  ১৮ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২৫

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও এখনো চুপচাপ রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের জন্য পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী এই ৩ উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

ওই নির্বাচনে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজাহারুল হক প্রধান মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশে শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাহার করে নেন।

তবে আওয়ামী লীগের ছাড়ের সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক। ওই নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আবু সালেকের বিরুদ্ধে মশাল প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামেন তৎকালীন জাসদের (ইনু) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান।

নির্বাচনী মাঠে নৌকা না থাকায় মশাল নিয়ে জয়লাভ করেন ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের তুখোড় ছাত্রনেতা নাজমুল হক প্রধান।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত পঞ্চগড়-১ আসনটি বিএনপি’র দখলে ছিল। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ মজাহারুল হক প্রধান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বেশ আগেভাগেই কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন তিনি। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় ব্যানারে উঠোন বৈঠক করছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রের নীতি নির্ধারক পর্যায়েও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দৌড়ে তিনি অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘২০০৮ সালে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। প্রায় ৩৪ বছর পর পঞ্চগড়-১ আসনটি আমি তাঁকে উপহার দিতে পেরেছিলাম। এরপর ৫ বছর আমি এলাকার মানুষের জন্য নিরলস কাজ করেছি। এজন্য ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে শেষ মুহূর্তে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ফোন করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘দলের একজন নিবেদিত প্রাণ হয়ে আমি সেই নির্দেশটি পালন করি। তবুও আমি তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাজ করে যাই। এজন্য এখনো মাঠেই আছি। দলীয় কাজ এবং জনসেবা ছাড়া আমার আর কাজ নেই। এলাকার মানুষ আমার সঙ্গে আছে। যেহেতু আমি আমার মনোনয়নটি প্রত্যাহার করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছি। এ কারণে আমি মনে করি এবার তিনি আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।’

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন এবং নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া একাধিক প্রার্থী। তাদের অনেকে এলাকায় গণসংযোগসহ ওপর মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট এবং এক সময়ের বাম ঘরানার ছাত্রনেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত কর্মকর্তা নাইমুজ্জামান মুক্তা।

নাইমুজ্জামান মুক্তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটিতে পরপর দু’বার সহ-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি শোকাবহ আগস্টকে কেন্দ্র করে ‘লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এই কর্মসূচিতে পঞ্চগড়-১ আসনের প্রতিটি কলেজে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠ ও এর ওপর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পুরো আগস্ট মাস জুড়ে পঞ্চগড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরছেন।

নাইমুজ্জামান মুক্তা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম এবং স্থানীয় গণমানুষের ভালোবাসাই আমার ভরসা। আওয়ামী লীগের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনোনয়ন চাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা বাস্তবায়নে সারাদেশে যেমন কাজ করেছি, নিজের জেলাতেও এ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এজন্য পঞ্চগড় জেলা ডিজিটাল কার্যক্রমে পরপর ৩ বার জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। সততা এবং যোগ্যতা দিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেক কাজ করেছি।

তিনি আরো বলেন, ’জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে তরুণ নেতৃত্ব খুঁজছেন। এজন্য আমি মনে করি আগামী দিনে ক্লিন ইমেজের এবং তরুণ নেতৃত্ব খুঁজলে আওয়ামী লীগ আমার প্রতি আস্থা রাখবে। সেক্ষেত্রে আমি আমার সততা এবং যোগ্যতা নিয়েই জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারবো।’

এদিকে বসে নেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট। তিনিও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগসহ বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও উঠোন বৈঠক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আগস্টের পরে তিনি প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসভা করবেন বলে জানান।

আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘একটা সময় ছিল আমরা পঞ্চগড়ের মানুষ অবহেলিত ছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পঞ্চগড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি ৫ বছর ধরে সফলভাবে সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর জনগণের ভোটে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবো বলে আশা করি।’

এদিকে রাজনীতি ও ভোটের মাঠে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান। তিনিও মাঝেমধ্যেই ঢাকা থেকে এসে জনসংযোগ করছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের হয়ে মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন।

সম্প্রতি জেলা জাসদের এক বর্ধিত সভায় তাকে আগামী নির্বাচনের জন্য পঞ্চগড়-১ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় জাসদের (আম্বিয়া-নাজমুল) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘বিএনপি জামায়াত জোটের আমলে দেশটি মূলত পাকিস্তানি ধারায় চলে গিয়েছিল। দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছিল। জঙ্গিবাদ উৎপাটন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ার জন্যই মূলত প্রথমে ১৪ দলীয় জোট গঠন হয়। পরে তা মহাজোটে রূপান্তরিত হয়। জোটগতভাবে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ বিতাড়িত করার কাজ এখনো চলছে। আসছে নির্বাচনও জোটবদ্ধভাবেই হবে আশা করি। সেজন্য মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাসদের হয়ে এই আসনের আমিই দাবিদার।’

অন্যদিকে ১৯৯১ সালের পর থেকে পঞ্চগড়-১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি বলে মনে করা হতো। ২০০৮ সালে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ আসনে বিএনপি বা ৪ দলীয় জোটের তেমন তৎপরতা নেই। চুপচাপ বিএনপির মধ্যে দলীয় কার্যক্রমও তেমন একটা চোখে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে নেই জেলা কমিটিও। রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এবং পৌর বিএনপি’র সভাপতি ও পৌরসভা মেয়র তৌহিদুল ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বর্তমানে পৌর বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি বর্তমানে দলীয় কাজের চেয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালনেই বেশি তৎপর।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এবারও এই আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মো. জমিরউদ্দীন সরকারের প্রার্থী হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিএনপির হাইকমান্ড তাকে অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলে অথবা বয়সের কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে সেক্ষেত্রে তার ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এমন সিদ্ধান্ত এলে তৃণমূল বিএনপি’র মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপির একটি পক্ষ।

এদিকে পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের অনুসারী বিএনপি নেতা এম এ মজিদ বলেন, ‘পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার ও ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের মধ্যেই যেকোনো একজন নিশ্চিতভাবে মনোনয়ন পাবেন। এরই মধ্যে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলে স্থানীয়ভাবে সব কোন্দল মিটে যাবে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আমরা আশা করি।’

অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, ‘গেলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের কিছু নেতার প্রতিহিংসামূলক আচরণে অল্প ভোটের ব্যবধানে আমাকে পরাজিত হতে হয়। জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে আমি মনোনয়ন পাবো আশা করি। আর মহাজোটে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের পছন্দের যে একশ’টি আসন রয়েছে তার মধ্যে আমি অন্যতম। এবার জোট অথবা দলীয় মনোনয়ন যেভাবেই হোক, এই আসনে আমি নির্বাচিত হবো বলে আশা করি।’

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। এই আসনে জাগপা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সদ্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে কেন্দ্রীয় জাগপার সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন। জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সম্প্রতি পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় একাধিক সভা করেছেন তিনি।

ব্যারিস্টার তাসমিয়া বলেন, ‘পঞ্চগড় নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি দলের এবং জোটের হয়ে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমার মনোনয়ন নিশ্চিত হলে আশা করি আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতা এবং বাবার আশীর্বাদ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবো। পঞ্চগড়কে নিয়ে আমার বাবার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো।’

  • ১৯ আগস্ট থাকছে মেহেরপুর-২ আসনের খবর

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh