নারায়ণগঞ্জ-৫ : লড়াই হবে ত্রিমুখী
জোটভুক্ত নির্বাচনের কারণে ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক সমঝোতার কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসন ছেড়ে দেয়ায় ওই সময় মনঃক্ষুণ্ণ হন আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা। একই ধারা অব্যাহত ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মতো নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটিও ছেড়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টিকে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থী চান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রাজধানী ঢাকার খুব কাছের জেলা নারায়ণগঞ্জ। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে জোটভুক্ত রাজনীতির জন্য রাজধানীর কাছের জেলার আসন শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া হলে তা রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এটির প্রভাবও পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বন্দর উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সোনারগাঁও উপজেলায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ব্যস্ত নিজেদের ঘর গোছাতে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোন্দল মেটানো না গেলে এর প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়বে বলে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম নাসিম ওসমানকে। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম ওসমান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় নাসিম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে হঠাৎ নাসিম ওসমানের মৃত্যু হলে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান তার মেজ ভাই ব্যবসায়ী নেতা একেএম সেলিম ওসমান। ২০১৪ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে সেলিম ওসমান সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এসএম আকরামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু এবং অপরজন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। এ দু’জন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেশ পুরানো মুখ এবং দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
দুই প্রার্থীর মধ্যে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ১৯৭৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্রলীগের মধ্যে দিয়ে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরপর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও হয়েছেন তিনি। এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ বারের বর্তমান সভাপতিও তিনি। নারায়ণগঞ্জ বারে তিনি মোট ৩ বার সাধারণ সম্পাদক এবং ৪ বার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য ওই সময় তাকে ২বার কারাগারে যেতে হয়েছিল। প্রবীণ এই নেতা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ এ রাজনীতিক বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত আছি। দল এবং দলের নেতাকর্মীদের জন্য চেষ্টা করেছি কিছু করতে। দলীয় প্রধান আমার যোগ্যতা বিবেচনা করে আমাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মনোনয়ন দিলে চেষ্টা করবো এলাকার মানুষের জন্য ভাল কিছু করতে। এরই মধ্যে তিনি সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছেন বলে জানান। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে চূড়ান্তভাবে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন।
অপর সম্ভাব্য প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ১৯৭৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করেও এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
সামরিক সরকারের আমলে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তার নেতৃত্বে প্রথম নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। স্বৈরাচার সরকারের আমলে তিনি দু’বার কারাবরণ করেন। পরে ৯১ সালে শহর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হন তিনি। ৯৬ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৯৭ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনোনীত হন। ২০০০ সালে বিশেষ কাউন্সিলে শহর আওয়ামী লীগের ফের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন খোকন সাহা।
২০০৩ সালের ১৯ অক্টোবর কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বার এই পদে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা শহর আওয়ামী লীগকে মহানগর আওয়ামী লীগে উন্নীত করে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন খোকন সাহাকে।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, মাতৃতুল্য প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। তা না হলে যাকেই তিনি মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই কাজ করবো।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে এর সুফল যিনিই দলের প্রার্থী হন তিনি পান।
দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, আমরা দলের সভাপতিকে অনুরোধ করেছি যেন আগামী নির্বাচনে এ আসনটি কোনো শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া না হয়।
নারায়ণগঞ্জের দলীয় নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে জেলার ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থী চান। তাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। তাই শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিতে হলে অন্য জেলায় যেনো ছাড়া হয়।
এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির, যুবলীগ নেতা আবু সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগ নেতা আর্জু রহমান ভূইয়া।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি থেকে এ আসনে দু’জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি এ আসন থেকে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের নাম শোনা যাচ্ছে। সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হন। তবে এই মুহূর্তে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ঘর গোছাতে ব্যস্ত দলের মহানগরের নেতারা।
অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ৩ বার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে এগিয়ে আছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র রাজনীতিতে কালামের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে আলোচনায় আছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, মনোনয়ন দেবেন দলীয় চেয়ারপারসন। তবে আমি দল গোছানোর কাজ করছি। সাংগঠনিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি। কারণ দল সংগঠিত হলে প্রার্থী যেই হোক তিনি সুবিধা পাবেন।
তিনি আরো বলেন, ৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৬টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। যার মধ্যে বিএনপি ৫টিতে অংশগ্রহণ করেছিল। ওই ৫টি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আমিই বিএনপি’র প্রার্থী ছিলাম। ওই ৫টি নির্বাচনের মধ্যে ৩টিতে আমি জয়ী হয়েছিলাম। দল আবার মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেব।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে বিএনপির যে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন চলছে সেখানে কাজ করছি। দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। মূলত ব্যবসায়ী এই নেতা বিকেএমইএ’র বর্তমান সভাপতি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির এক নম্বর সদস্য।
গেলো ৪ বছরে সেলিম ওসমান নিজের অর্থায়নে এই আসনে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্কুলের নতুন ভবন তৈরি করা। এছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবর স্থানে মোটা অংকের অনুদান দিয়ে আলোচনায় আছেন তিনি। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট যাত্রীদের জন্য ফ্রি করে দিয়ে তিনি সেবার অনন্য উদাহারণ সৃষ্টি করেছেন।
আসছে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবো কি নেবো না তা আসছে বছরের ৩০ জুন ঠিক করবো। এর আগে আমি কিছু বলবো না। তবে ওই সময় পর্যন্ত আমি উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখবো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য দলগুলোও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে তারা এখনেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। তারা আরো পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, সিপিবি’র সঙ্গে বাসদের একটি জোট রয়েছে। তাই নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৩টিতে সিপিবি এবং বাকি দু’টিতে বাসদ প্রার্থী দেবে।
সেক্ষেত্রে সিপিবি নারায়ণগঞ্জ-৫ থেকে অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষকে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে হাফিজুল ইসলামকে এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে অ্যাডভোকেট জিয়া হায়দার ডিপথিকে প্রার্থী হিসেবে আগেই ঘোষণা করেছে। আর বাকি দু’টি আসনে বাসদ তাদের প্রার্থী ঠিক করবে।
- ১৮ আগস্ট শুক্রবার থাকছে পঞ্চগড় আসনের খবর
জেবি/এসএস
মন্তব্য করুন
চলতি বছরের ফিতরার হার নির্ধারণ করল ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হিজরি ১৪৪৫ সনের হিজরি সনের সাদাকাতুল ফিতরের (ফিতরা) হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
এর আগে, গত বছর ফিতরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ইসলামী শরীয়াহ মতে, মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী গম, আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন।
নেছাব পরিমাণ (সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ) মালের মালিক হলে মুসলমান নারী পুরুষের ওপর ঈদের দিন সকালে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হয়। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়।
ই-লাইসেন্সধারীদের জন্য সুসংবাদ
এখন থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে না রেখেও স্মার্টফোনে সংগৃহীত ই-লাইসেন্স দেখিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন চালকরা। ইতোমধ্যে এর অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।
রোববার (২৪ মার্চ) বিআরটিএ সংস্থাপন শাখার উপসচিব মো. মনিরুল আলম স্বাক্ষরিত এক সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে ভিসা প্রসেসিং, বিদেশে ব্যবহার, চাকরিতে নিয়োগ ইত্যাদি প্রয়োজনে মোটরযান চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড ও ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স উভয়ই সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। এতে থাকা কিউআর কোড দ্বারা সরাসরি ডাটাবেইজ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কি তথ্যাদি যাচাই করা যাবে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো-২ সার্কেলের উপ-পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে মোটরযান চালানো যায়। তবে এখন থেকে ই-লাইসেন্স যুক্ত করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে না রেখেও স্মার্টফোনে সংরক্ষণ করা ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়েও চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি অন্যান্য কাজেও স্মার্টফোনের ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারবেন।
বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ শুরু, যেসব দেশ থেকে দেখা যাচ্ছে
চলতি বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ। সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল ১০টা ২৩ মিনিট থেকে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে।
এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী থাকবে এশিয়ার উত্তর ও পূর্ব অংশ। পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধ থেকে সোমবারের চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। এছাড়াও চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় আর্কটিক ও আন্টার্টিকার বহু অংশ দেখতে পাবে গ্রহণ। তবে বাংলাদেশ বা ভারত থেকে দেখা যাবে না এই গ্রহণ।
আজকের চন্দ্রগ্রহণের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে গ্রহণের সময়ে সাধারণত সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করে। যাকে ‘পেনম্ব্রাল’ চন্দ্রগ্রহণ বলে। এতে সূর্যের আলো পৃথিবীর উপরে পড়ে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে ঢেকে দেয়। গ্রহণের এ পর্যায়ে পৃথিবী, সূর্যের আলো পুরোপুরি ভাবে আড়াল করতে পারে না। বরং, চাঁদের ঔজ্জ্বল্য খানিক হ্রাস পায়।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা নাসা জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে বছরের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণটি হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁদের আংশিক গ্রহণ হওয়ার কথা। তা দেখা যাবে আফ্রিকা, আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে। এদিকে, আগামী ৮ এপ্রিল বিরল এক সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্ব। ২০২৪ সালের প্রথম এ সূর্যগ্রহণ হবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। এই ঘটনা ঘটছে ৫৪ বছর পর। এর আগে ১৯৭০ সালে এই সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এর পরে এটি ২০৭৮ সালে ঘটবে।
ভাঙ্গা-রূপদিয়া রেলপথ / উচ্চগতিতে ছুটবে ট্রেন, সতর্ক থাকার অনুরোধ
ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে রূপদিয়া স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক উচ্চগতিতে ট্রেন চলাচল করবে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চ ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন উচ্চগতিতে চলাচল করবে। এসময় ট্রেনের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ট্রেন চলাচলের সময় রেললাইনের ওপর জনসাধারণের চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ এবং দণ্ডণীয় অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সংলগ্ন এলাকাবাসী ও এলাকায় চলাচলকারী সর্বসাধারণ পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ, মানসিক প্রতিবন্ধী (যদি থাকে) এবং গৃহপালিত প্রাণীগুলোকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
দ্রুত ভিসা দিতে ইতালি দূতাবাসের নতুন নির্দেশনা
দ্রুত ভিসা দিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকার ইতালি দূতাবাস।
বুধবার (২৭ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দূতাবাস।
এতে বলা হয়েছে, ভিএফএস গ্লোবালকে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং পদ্ধতি পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে দূতাবাস। সেই সঙ্গে বৈধ নুলাওস্তাসহ (ওয়ার্ক পারমিট) ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টকারীরা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আবেদন করতে পারবে। দয়া করে ধৈর্য ধরুন এবং মনে রাখবেন ভিসার জন্য বুকিং স্লট নিতে কোনো চার্জ লাগবে না।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভিএফএস গ্লোবাল তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ইতালি দূতাবাসের নির্দেশ অনুসারে, ভিএফএস গ্লোবাল ভিসার অনুরোধ ফাইল করার জন্য একটি নতুন অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। এ পদ্ধতিতে জরুরি প্রয়োজনে সব আবেদনকারীদের সেই অনুযায়ী একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার অনুমতি দেবে। নতুন এ নিয়ম কয়েক দিনের মধ্যে কার্যকর এবং সর্বজনীন হবে এবং এটি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, অনুমোদন আসার পর বাংলাদেশিদের ইতালিতে যেতে প্রথমে ঢাকায় দেশটির দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে ভিএফএস গ্লোবাল থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। সম্প্রতি ভিএফএসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহজেই মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি কর্মীরা।
জিম্মি জাহাজের নাবিকদের জন্য ছাগল-দুম্বা আনছে জলদস্যুরা
আঠারো দিন ধরে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকদের জন্য তীর থেকে ছাগল ও দুম্বা আনছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ফলে তারা খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না। তবে জাহাজে বিশুদ্ধ পানি কমে যাওয়ায়, সেটি নিয়ে তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
নাবিকদের বরাতে জাহাজটির মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ ও সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জলদস্যুরা কোনো জাহাজ জিম্মি করলে সাধারণত তারাই খাবার সরবরাহ করে থাকে। তবে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
জিম্মি জাহাজের নাবিকদের থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে নাবিকদের সংগঠনের একজন নেতা বলেন, খাবার নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই। কারণ, জলদস্যুরা জাহাজে ছাগল ও দুম্বা আনছে। তবে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। কারণ, জলদস্যুরা জাহাজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে জাহাজে যা বিশুদ্ধ পানি আছে, তা রেশনিং করে চলতে হচ্ছে। সপ্তাহে দুই দিন এক ঘণ্টা করে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন নাবিকেরা।
জাহাজের মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, আশা করি খাবার নিয়ে সমস্যা হবে না। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব চেষ্টা করছি জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করার। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি করে সোমালিয়ার দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রয়েছে।
ট্রেনের টিকিট : একদিনে গ্রাহকের ৪০ কোটি টাকা লোকসান
আগামী ১০ এপ্রিলকে ঈদের দিন ধরে গত ২৪ মার্চ থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ছয় দিনের মধ্যে শুক্রবার (২৯ মার্চ) রেলের ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপে সর্বোচ্চ হিট করেছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। এদিন ঢাকা থেকে ৩৩ হাজার ৫০০টি ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। টিকিট বিক্রির প্রথম ৩০ মিনিটেই অনলাইন অথবা অ্যাপে টিকিট কাটার চেষ্টায় দুই কোটি ৭২ লাখ বার হিট করেছেন গ্রাহকরা। আর সারাদিনে তা চার কোটির বেশি বার। এতে গ্রাহকদের অন্তত ৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার প্রতি গ্রাহক টিকিট কাটতে গিয়ে ন্যূনতম ১০ টাকা খরচ করেছেন। তবুও ৯৯ শতাংশ গ্রাহক টিকিট পাননি। সেই হিসেবে এদিন টিকিট কাটতে যেয়ে গ্রাহকদের অন্তত ৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। যদিও গ্রাহকদের দাবি প্রতিবার টিকিট কাটার চেষ্টায় ২০ টাকা করে ৮০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
তবে এ সময় গড়ে প্রতি টিকিট ৫০০ টাকা ধরে টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ের আয় মাত্র ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে যে ১০ হাজার গ্রাহক সাড়ে ৩৩ হাজার টিকিট নিতে সক্ষম হয়েছেন তাদেরও টিকিটপ্রতি অনলাইন সার্ভিস চার্জ বাবদ অতিরিক্ত ২০ টাকা খরচ হয়েছে।
এদিন সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের মোট ১৫ হাজার ৮৯০টি টিকিট ছাড়া হয়। এর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায় ৯৫ শতাংশ টিকিট। এদিকে দুপুর ২টায় ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিটসহ ১৬ হাজার ৬৯৬টি টিকিট ছাড়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে এসি চেয়ার, কেবিন, নন-এসি চেয়ার ও এসি-চেয়ারের টিকিটও শেষ হয়ে যায়। তার পরও লাখো মানুষ অনলাইনে টিকিটের জন্য অ্যাপে প্রবেশ করেন।
জনগণের টাকা লোকসান এবং সরকারি আয় কমার কারণ হিসেবে টিকিট বিক্রির পুরো বিষয়টি বেসরকারি খাতে দেওয়াকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের এত উন্নয়ন ও এত সক্ষমতা থাকার পরও টিকিট বিক্রয়ের বিষয়টি বেসরকারি খাতকে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজস্ব আয় ব্যক্তি পকেটে চলে যাচ্ছে, গ্রাহকেরও লোকসান হচ্ছে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, টিকিট বিক্রয়ের স্থান থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছুই রেলের, সরকার চাইলেই টিকিট বিক্রয়ের পুরো বিষয়টা রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে।